বগুড়া অফিস
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে শুরু করে বেসরকারি ব্যাংক-বিভিন্ন সরকারি দফতর এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও নিয়োগ দেন তিনি। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দিতেও সিদ্ধহস্ত এই ব্যক্তি নিজেকে পরিচয় দেন যুবলীগ নেতা হিসেবে। তার এসব নিয়োগপত্র আর ঋণের চেক দেখে সহজে বোঝার উপায় নেই, এর সবই ভূয়া। সরকারি চাকরি আর ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে দেশের শত শত তরুণের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই প্রতারক রাব্বী শাকিল ওরফে ডিজে শাকিলকে দুই সহযোগীসহ বুধবার গ্রেফতার করেছে বগুড়ার গোয়েন্দা পুলিশ। তার অফিস থেকে জব্দ করা হয়েছে চাকরি ও ঋণের নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া ১২শ কোটি টাকার চেক এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের ভূয়া নথি এবং জাল চেক তৈরির সরঞ্জাম।
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা তিনজন হলেন- তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রাব্বী শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল (৩২), তার সহযোগী আইটি বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন কবির (২৮) ও ম্যানেজার হারুনার রশিদ (২৬)।
রাব্বী শাকিল ওরফে ডিজে শাকিল কথিত রিশান ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস নামের দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেযারম্যান। তারা এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে দেশব্যাপী প্রতারণার জাল বিস্তার করেছিল। বুধবার রাতে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তার অফিস থেকে উদ্ধার করা হয় এক হাজার দুইশ’ এক কোটি টাকার ভুয়া চেক, সামরিক বাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র, বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভুয়া পরিচয়পত্র ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদী।
বগুড়ার দুই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আমায়রা এগ্রোফার্মের মালিক আমানতউল্লাহ তারেক ও অভি এগ্রোফার্মের মালিক আশিক জানান, তাঁরা উভয়েই ইন্টারন্যাশনাল লোন সার্ভিসের নামে ফেসবুক পেজে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে শাকিলদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কমিশনের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ পাবার আশ্বাসে তাকে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকাও দেন ওই দুই তরুণ। এভাবেই কয়েক দফায় ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ডিজে শাকিল। এরপর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক গত ফেব্রুয়ারিতে দুজনকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ অনুমোদনের চিঠি এবং সাড়ে চার কোটি টাকার দু’টি চেকের স্ক্যান কপি মেইলে দেয় প্রতারক শাকিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও চেকের মূল কপি না দেওয়ায় তরুণ উদ্যোক্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঋণ অনুমোদনের চিঠি এবং চেকগুলো ভুয়া। পরে তারা বিষয়টি বগুড়া জেলা পুলিশকে জানালে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাড়াশে অভিযান চালায়।
অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইমরান মাহমুদ তুহিন জানান, গ্রেফতারকৃতদের অফিসে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চেক ছাড়াও সামরিক বাহিনী ও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র, চুক্তিনামা, ৬০টি সিম কার্ড, তিনটি কম্পিউটার, বিভিন্ন মিডিয়ার কয়েকটি ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের নামে বগুড়া সদর থানায় হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, সরকারি চাকরি বা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে শাকিল বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন গত কয়েক বছরে। বুধবার তার অফিস থেকেই জব্দ করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকার চেকসহ বিভিন্ন দফতরের ভূয়া নিয়োগপত্র আর এসব জাল নথি তৈরির সরঞ্জাম।
এসব প্রতারণার কাজে শাকিল ব্যবহার করতেন ২২টি অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ বেশ কিছু ফেইসবুক আইডি ও পেইজ। আর সেসব মাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, টাঙ্গাইলসহ বেশ কটি জেলার শতাধিক তরুণ।
এদিকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর ডিজে শাকিল নিজেকে তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি বলে দাবি করেন ।
