আন্তজাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে গত বছর পুলিশি নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি জর্জ ফ্লয়েডকে নির্যাতনের নতুন ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। আদালতে তৃতীয় দিনের মতো অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শাউভিনের বিচারকার্য পরিচালনাকালে স্থানীয় সময় গত বুধবার নতুন ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর জানানো হয়েছে। নতুন প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পর জর্জ ফ্লয়েড পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুনয় করছেন, ‘আমি খারাপ লোক নই।’ ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শাউভিন ফ্লয়েডের ঘাড় টানা ৯ মিনিটের বেশি সময় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে আছেন। ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা টমাস লেন, জে আলেকজান্ডার কুয়েং ও টো থাওয়ের বডি ক্যামেরা থেকে ধারণ হওয়া ফুটেজ আদালতে দেখানো হয়। নির্যাতনের সময় অভিযুক্ত শাউভিনের বডি ক্যামেরা পড়ে যাওয়ায় ওই ক্যামেরা থেকে ঘটনাটি দেখা যায়নি। টমাস লেনের বডি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের মুখোমুখি হওয়ার সময় জর্জ ফ্লয়েড অনুনয় করছেন, ‘দয়া করে আমাকে গুলি করবেন না…আমি কিছুদিন আগেই আমার মাকে হারিয়েছি।’ এরপর ফ্লয়েডকে হাতকড়া পরানো হয়। ওই সময় ফ্লয়েড পুলিশ কর্মকর্তা লেন ও কুয়েংকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা যা-ই বলবেন, আমি তা-ই করব।’ এরপর পুলিশ তাঁকে একটি গাড়িতে তোলার সময় ফ্লয়েড কাঁদতে থাকেন এবং প্রতিরোধের চেষ্টা করতে করতে বলেন, তিনি ক্লাস্টোফোবিক এবং তাঁর উদ্বেগ কাজ করছে। এরপর শাউভিন ও তাঁর সহকর্মী থাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ওই সময় ফ্লয়েডকে গাড়ি থেকে টেনে নামানোর পর মাটিতে আটকে রাখা হয়। তখন ফ্লয়েড তাঁর মাকে ডাকতে থাকেন এবং পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলতে থাকেন যে, তিনি তাদের ভালোবাসেন। ওই সময় পথচারীরা ফ্লয়েডের পালস পরীক্ষা করতে বলেন এবং চিৎকার করে বলতে থাকেন যেন তাঁকে এভাবে আটকে রাখা না হয়। ১৯ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার মার্টিন নামের দোকানের এক কর্মচারী আদালতে জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফ্লয়েডের সঙ্গে দোকানের ভেতরে অল্প সময় কথা হয়েছে তাঁর। ক্রিস্টোফার বলেন, ‘ওই সময় ফ্লয়েডকে নেশাগ্রস্ত মনে হচ্ছিল। কারণ, তিনি খুব কষ্ট করে সাধারণ একটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। তবে তিনি কথোপকথন চালিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন।’ ফ্লয়েডকে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে বর্ণনা দেন ক্রিস্টোফার। দোকানের ভেতরে নজরদারি ভিডিওতে দেখা যায়, ফ্লয়েড হাসছেন, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, এবং আশপাশে হাঁটছেন।
দোকানের কর্মচারী ক্রিস্টোফার জানান, ফ্লয়েডকে তিনি সিগারেটের একটি প্যাকেট দিয়েছিলেন। বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে একটি জাল নোট পান। নোটটির রঙ ও ধরন দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে, সেটি জাল ছিল। তবে ওই সময় সেটিকে জাল নোট বলে মনে হয়নি ফ্লয়েডের। ক্রিস্টোফার জানান, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে, ফ্লয়েডের মুখোমুখি না হয়ে বরং নিজের বেতন থেকে সিগারেটের অর্থ কেটে রাখবেন। কিন্তু এরপরই ম্যানেজারকে বিষয়টি জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ সময় অন্য এক কর্মচারী পুলিশকে ডাকেন। ফ্লয়েডকে গ্রেপ্তার হতে দেখা ক্রিস্টোফার জানান, তিনি অপরাধবোধে ভুগছেন। বলেন, ‘যদি আমি বিলটি না নিতাম, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না।’ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ম্যাকমিলান নামের ৬১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, যিনি পথচারী হিসেবে প্রথমে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন, তিনি ফ্লয়েডকে পুলিশের গাড়িতে উঠতে অনুরোধ করেন এবং পুলিশ কর্মকর্তা শাউভিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার হাঁটু তাঁর ঘাড়ের ওপর, এটি ঠিক নয়।’ তিনি জানান, ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার সময় অসহায়বোধ করছিলেন। আদালতে ভিডিওটি প্রদর্শন করার সময় ম্যাকমিলান কাঁদতে শুরু করেন। গত বছরের ২৫ মে মিনিয়াপোলিসে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিনিয়াপোলিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। ফ্লয়েডের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ২০ ডলারের একটি জালনোট ব্যবহার করেছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার আগে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, হাতকড়া পরাতে বাধা দিচ্ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় নিরস্ত্র ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু রাখা ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শাউভিনসহ চারজন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। সেই সঙ্গে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে ডেরেক শাউভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।