লাউয়াছড়ার শতবর্ষী ‘প্রাকৃতিক চাপালিশ’ 

লাউয়াছড়ার শতবর্ষী ‘প্রাকৃতিক চাপালিশ’ 

২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস

মৌলভীবাজার: বিশালাকৃতির বৃক্ষ মানেই প্রাকৃতিক বনের সুরক্ষা। অর্ধশত বা শতবর্ষী বৃক্ষ মানেই বসবাসরত বন্যপ্রাণীদের সার্বিক নিরাপত্তা কিংবা খাদ্যসম্ভারের অকুতোভয় আহ্বান। এর মাধ্যমেই নিহিত বনের সুস্বাস্থ্য। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আজ আমাদের বনগুলোতে শতবর্ষী বৃক্ষ বিলুপ্তপ্রায়। সংঘবন্ধ বৃক্ষখেকোদের ভয়ংকর লোলুপ দৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই দুটোই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সংরক্ষিত বনের প্রাচীন বৃক্ষদের বেঁচে থাকার প্রতিবন্ধকতা হয়ে।
সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বনভ্রমণের লতাগুল্ম পথে হঠাৎ আটকে যায় চোখ। দেখা গেলো, বিশালাকৃতির একটি চাপালিশ (Monkey Jack Plant) বৃক্ষ তার সুউচ্চতা ছড়িয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। এই গাছটি এতই বড় যে, গাছটি শেষমাথায় চোখের জ্যোতি ঠিক মতো দৃশ্যমান হচ্ছিলো না। গাছটির দেহের পাশ দেখেই বোঝা যায় চাপালিশের বিশালতা! এসব গাছের ডালে ডালে বিচরণ করে টিকে আছে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন উল্লুকেরা (Hoolock Gibbon)।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী  বলেন, আমরা যদি বনের গাছগুলোর প্রতি একটু বেশি রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হই, তাকে বড় করে তোলার সব প্রকাশের সুবিধা দেই। তবে, লাউয়াছড়ার এই বিশালাকার চাপালিশ গাছের মতো অন্যান্য গাছও কিন্তু দীর্ঘতর হতে পারে। এর পাশ ১৭ ফুট। এমন একটি বৃক্ষ তৈরি হতে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ বছর সময় লাগে। চাপালিশের আরেকটি নাম চাম্বল। ’ বনের গাছগুলো এভাবে যদি বিশালাকৃতির হয় সেটা একাধারে বন্যপ্রাণীর খাবারের যোগান দেবে। আরেকটি হলো সে গাছটি পরিবেশ থেকে প্রচুর কার্বণ নিজের শরীরে শুষে নিয়ে প্রকৃতিকে তিনি সতেজ রাখবে। এতে করে মানুষ ও বন্যপ্রাণীকূল সুরক্ষিত থাকবে। গাছগুলো কিন্তু বায়ুমণ্ডলের বিষাক্ত উপাদানগুলো তাদের শরীরে এবং শেকড়ের মধ্যে কার্বণ আটকে রেখে দেয় বলে জানান রেজাউল। তিনি আরও বলেন, শুধু লাউয়াছড়াই নয়, সংরক্ষিত বনগুলোকে যদি আমরা বনের প্রাকৃতিক গাছগুলোকে এভাবে বড় হওয়ার সুযোগ দেই তাহলে প্রতিটি বন্যপ্রাণীর  জন্য এ বৃক্ষগুলো অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। বিশেষ করে যত উঁচু গাছ থাকবে বন্যপ্রাণী কিন্তু তত সেফ (নিরাপদ)। বিশেষ করে এ জাতীয় চাপালিশ গাছগুলো উল্লুক, মুখপড়া হনুমান, চমশাপড়া হনুমান এদের আবাসস্থল এবং প্রাণরক্ষকারী উৎস। কারণ যে প্রাণীগুলো খুব একটা মাটির নিচে নামে না তাদের জন্য এমন আকৃতির চাপালিশ গাছগুলো খুব বেশি দরকার। এসব গাছে কিন্তু শকুন, চিলসহ নানান বড় পাখিরাও বাসা করে থাকে। ’ লাউয়াছড়ায় বনায়ন সম্পর্কে বিভাগীয় এ বন কর্মকর্তা বলেন, আমরা তো হেবিডেট ইনপ্রুফমেন্ট প্রজেক্টের (সুফল) মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের জন্য আসন্ন বর্ষা মৌসুমেই লাউয়াছড়ায় ৫০ হেক্টর (১২৫ একর) জায়গায় ফলদ এবং বনজ বৃক্ষ রোপণ করবো। আমাদের লাউয়াছড়ার বাগমারা ক্যাম্পের হিড সংলগ্ন এলাকায় বড় গাছ নেই, সেই জায়গাতে বনায়ন করবো। তাহলে এ বন কিছুটা সম্প্রসারিত হবে। সেই বনায়নের মধ্যে আমি প্রচুর পরিমাণে চাপালিশ গাছ রেখেছি। যাতে করে উঁচু বৃক্ষে বিচরণকারী প্রাণীরা সুদূরপ্রসারী একটা সাপোর্ট (অবলম্বন) পায়।দুই বৃক্ষের তুলনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাপালিশ হলো কাঁঠাল প্রজাতির বৃক্ষ। একই পরিবারের বৃক্ষ। কাঁঠালটা একটু বড় সাইজের হয়, আর চাপালিশ ছোট আকৃতির হয়। কাঁঠালটা সুমিষ্ট আর চাপালিশটা একটু টক। কাঁঠালের চাইতে চাপালিশ কিন্তু অনেক বড় আকৃতির এবং সোজা গাছ হয়। কাঁঠালগাছ কিন্তু আকাবাঁকা হয়। বন্যপ্রাণীর জন্য কাঁঠাল এবং চাপালিশ দুটোই কিন্তু খুব প্রিয় খাবার। বিশেষ করে উল্লুকের অন্যতম প্রিয় ফল এবং প্রিয় গাছই হলো চাপালিশ। যেহেতু আমাদের লাউয়াছড়ায় উল্লুকের (Hoolock Gibbon) কয়েকটি পরিবার বসবাস করে তাই তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনধারার জন্য চাপালিশ জাতীয় বৃক্ষগুলে খুব বেশি প্রয়োজন বলে জানান সিলেটের ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দিয়ে শাস্তির মুখে মালয়েশিয়ান কোম্পানি

বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশ দল