নিজস্ব প্রতিবেদক ; গত বছরের ১৮ মার্চ গণমাধ্যমকর্মীরা রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সভাকক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফ্রিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় তৎকালীন পরিচালক বর্তমানে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার ঘোষণা, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বয়স ৭০ বছর। মৃত ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি তার হার্টে স্টেন্ট পরানো ছিল।’ বিদেশ থেকে আসা ও সংক্রমিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান আইইডিসিআর পরিচালক। আইইডিসিআর পরিচালকের মুখে এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে গোটা সভাকক্ষে কয়েক সেকেন্ডের জন্য পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। এরপরই বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার কর্মীদের মধ্যে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেশে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর সংবাদটি প্রধান শিরোনাম হিসেবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হতে থাকে। এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ওই দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪। নতুন আক্রান্ত চারজনের মধ্যে একজন নারী ও তিনজন পুরুষ। একজন আগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন। আর বাকি তিনজন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এবং একজন কুয়েত থেকে এসেছেন। এরপর কেটে গেছে একে একে ৩৬৫টি দিন। সরকার প্রথমদিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় গত বছরের ১৭ মার্চ। ২২ মার্চ ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা পরবর্তীতে সাত দফা বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত বহাল রাখা হয়। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের মতো দেশজুড়ে অবরুদ্ধকরণ না হলেও সারাদেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সারাদেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একইসঙ্গে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।
সেদিনের ঠিক এক বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৮৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৯ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৬২৪ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সরকারি ও বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবরেটরিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ২১২টি নমুনা সংগ্রহ এবং ২০ হাজার ৯২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এই সময়ে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ ১২ জন ও নারী ৪ জন। তাদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত এক বছরে রোগী শনাক্তের হার ১২ দশশিক ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৩ শতাংশ, সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং মৃত্যুহার এক দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত এক বছরে মোট মৃত আট হাজার ৬২৪ জনের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৫২১ জন (৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ) ও নারী দুই হাজার ১০৩ জন (২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। মোট মৃতের ৮০ শতাংশের বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক চার হাজার ৮১৭ জন (৫৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ) এর বয়স ৬০ বছরের বেশি আর ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী দুই হাজার ১৩১ জন (২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ)। করোনায় মোট মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ চার হাজার ৮৪৫ জন (৫৬ দশমিক ১৮ শতাংশ) এবং চট্টগ্রাম বিভাগের এক হাজার ৫৮৭ জন (১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ)। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা প্রদান শুরু করে। দেশে এ পর্যন্ত ৪৬ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।