নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা এবং সবক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব প্রদানের মতো অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি। এবছর ‘টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন : নেতৃত্বে নারী ও সমতা’ প্রতিপাদ্যে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে টিআইবি। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে দেশের ২৪টি উপজেলার নারী নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) অংশগ্রহণে একই প্রতিপাদ্যে দুইদিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে টিআইবির অনুপ্রেরণায় ৪৫টি অঞ্চলে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এবং ঢাকা ও সনাকভিত্তিক ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যদের অংশগ্রহণে অনলাইনে আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কন্টেন্ট রাইটিং প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তাই নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন যেমন অসম্ভব, তেমনি নেতৃত্বে নারীর কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া জেন্ডার সমতা ও সুশাসন নিশ্চিত করাও সম্ভব নয়। জেন্ডার অসমতা ও দুর্নীতি পরস্পর সম্পর্কিত। জেন্ডার অসমতা সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে বাধাগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে- দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাহত হয়। যেসব দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষময়তায়ন সাফল্যজনক, সেসব দেশসমূহ দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাফল্য পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন কাক্সিক্ষত মাত্রায় অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। আবার দুর্নীতির কারণে পুরুষের তুলনায় নারীর ঝুঁকি বেশি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, টিআইবি পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ-২০১৭ এর তথ্যমতে সেবাগ্রহণকারী হিসেবে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীর ওপর সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতির বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। নারী যেমন দুর্নীতির শিকার হয়, তেমনি নারী দুর্নীতির মাধ্যম ও সংঘটক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দুর্নীতির কার্যকর প্রতিরোধে নারীর ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। চলমান কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ড. জামান আরও বলেন, করোনা অতিমারি থেকে উত্তরণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমানতালে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনেক; সম্প্রতি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ অনুপ্রেরণাদায়ী নারী নেতৃত্বের স্বীকৃতি তার প্রমাণ। কিন্তু এমন সময়েও নারীদের প্রতি সহিংসতা কিংবা নারীদের অবদমনের প্রক্রিয়া বন্ধ নেই। বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ অতিমারিকালে ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারীর দৈনন্দিন জীবনাচার নিয়ন্ত্রণ এবং ৩৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আর ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন উভয় ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকায় এবং পারিবারিক উপার্জন হ্রাস পাওয়ায় বাল্যবিবাহ এবং ঝরে পড়া নারী শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে। অথচ টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন জরুরি। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-৫ এ নারীদের সমঅধিকার এবং নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অভীষ্ট-১৬ তে দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তাই সব পর্যায়ে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব এবং সমঅধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন অসম্ভব।