সুস্বাদু ও পুষ্টিকর গোলপাতার গুড়

সুস্বাদু ও পুষ্টিকর গোলপাতার গুড়
গোলবাগান বা বহরের মালিক নিখিল চন্দ্র হালদার জানান, আষাঢ় মাসে গোল গাছের ডগা বা ডাণ্ডিতে হয় গাবনা ফল। পৌষ মাসে ফলসহ স্থানীয় বিভিন্ন নিয়মে ডগা বা ডাণ্ডি দেওয়া হয় নুইয়ে। তবে ওইসময় ডাণ্ডিটি মানুষের পায়ের আলতো লাথি দিয়ে দক্ষতার দোয়ানো বা মেসেজ করে দেওয়া হয়, রসে ভার করার জন্য। প্রায় দুই সপ্তাহ এটা করার পর ডগার মাথা থেকে গাবনা ফলের থোকাটি ধারালো দা দিয়ে কেটে ফেলা হয়। আর কাটা অংশ প্রাকৃতিক নিয়মে তিনদিন শুকিয়ে নেওয়ার পর কয়েকদিন সকাল-বিকেল দুই বেলা আবারো পাতলা করে কাটা হয়।এরপর ডগা বা ডাণ্ডিতে রস আসা শুরু হলে সংগ্রহের কাজটি শুরু হয়ে যায়। এরপর সেই রস বাগান থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে ভালোভাবে ছেঁকে নেওয়া হয়। পরে বড় পাত্রে তা ঢেলে আগুনে জ্বাল দিতে দিতে তৈরি হয়ে যায় মানসম্মত গুড়।তিনি জানান, খেজুরের রসের তুলনায় এ রসের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় ৮ কলস রসে ১ কলস গুড় হয়, যেখানে খেজুরের রসের ১৬ কলস রসে ১ কলস গুড় হয়। যার বেশ ভালো দামও পাওয়া যায় বর্তমানে।গোলের রস দিয়ে তৈরি করা গুড়ের চাহিদা রয়েছে উপকূলীয় কলাপাড়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার কলাপাড়া পৌরশহরে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এই গুড়। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে প্রায় দুইশ পরিবারের জীবন-জীবিকার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গোলগাছের গুড়। যার মধ্যে অনেক পরিবার তিনপুরুষ ধরে গোলপাতার গাছ থেকেই উপার্জন করে চলছেন।গোলবাগান বা বহরের মালিকের স্ত্রী কল্পনা রানী হালদার বলেন, গোলগাছ উপকারী, তবে সবাই জানে না। গোলগাছের লম্বা পাতা দিয়ে গ্রামগঞ্জে তৈরি হয় ঘরের ছাউনি, যা টিনের কাজ করে। এর রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু গুড়, যা খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার লাকড়ি হিসেবে গোলপাতা বাগানের মরে যাওয়া মুথা (ডাটা), ফল ব্যবহার করা হয়।এদিকে স্থানীয়ভাবে প্রচলন আছে গোলের রস খেলে পেটের কৃমি যেমন দমন হয়, তেমনি কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হালদার বলেন, গোলের রস ও রস থেকে তৈরি গুড় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় এই রস ও গুড় সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায় গোলগাছ থেকে রস সংগ্রহ করতো এবং তাদের কাছ থেকে অন্য অধিবাসীরা শিখে এখন গোলের রস ও গুড় সংগ্রহ করে। এই রস ও গুড়ের মধ্যে অনেক পুষ্টিকর সমৃদ্ধ উপদান, বিশেষ করে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ পাওয়া যায়। যা স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষা রাখতে সহায়তা করে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন