দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন রেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী তানজিলা

দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন রেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তাকর্মী তানজিলা
পরে এখানে আসার পর এই চাকরিতে আবেদন করার পর নিয়োগ পাই। এজন্য এই চাকরি হাতছাড়া করিনি। কারণ নারী পুরুষ সমান সমান বা সংবিধানে যতই নারী-পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত হোক না কেন, কোথাও না কোথাও আজও মেয়েদের অবহেলিতভাবে জীবনযাপন করছে। কোথাও যেন একটা ছেদ রয়ে গেছে। আজও মেয়েরা নিজের শর্তে বাঁচতে পারেন না। প্রাচীনকালে ঠিক যে সময় থেকে সমাজে নারী-পুরুষ বিভাজন এবং ব্যক্তি সম্পত্তির উদ্ভব ঘটেছে, তখন থেকেই পুরুষের আধিপত্য বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করছে। তবে, এখনও নারীদের কাজ পাওয়া কঠিন।তানজিলা বলেন, শুরুর দিকে স্বজনদের মধ্যে অনেকে নিরুৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, এই কাজ আমি পারবো না। আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হবে। আমি ভাবলাম, আমি যদি কাজ না করেই ভেবে বসে, আমি পারবো না, তাহলে তো হলো না। কাজ না করে ভয় পাওয়ার তো কোনো মানে হয় না। আগে কাজ করে দেখি পারবো কিনা, পরে না হয় ভেবে দেখা যাবে। ভালো না লাগলে পরে চাকরি ছেড়ে দেবো। এই ভেবে কাজ শুরু করলাম। এই আসছে ১৩ মার্চ আমার চাকরির ৩ বছর পূর্ণ হবে। আমি নিজেকে নিয়ে গর্ব করি। কারণ আমি ছোট-বড় যাই হোক একটা কাজ করি।তানজিলার কাজে সময় সহায়তা করেন তার স্বামী। তানজিলা বলেন, আমার স্বামী আমাকে সহায়তা করেন। পরিবারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চাকরি করার ক্ষেত্রেও তিনি অনেক সহায়তা করেন। এই চাকরি করার জন্য মূলত তিনি উৎসাহ দিয়েছেন। আমার একটি ছোট মেয়ে আছে। সে নার্সারিতে পড়ে। চাকরির পাশাপাশি তাকেও দেখাশোনা করতে হয়। সবমিলিয়ে কাজের মধ্যে থাকতে ভালোই লাগে।

লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে সবসময় সতর্ক থাকতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এটা শহরের প্রবেশমুখ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। এজন্য সবসময়ই সতর্ক থাকতে হয়। অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। গেট খুলতে মাত্র ২-৩ মিনিট সময় নিলে অনেকে খারাপ মন্তব্য করেন। আবার অনেকে নিজেরাই গেট খুলে চলে যান।এসব বিষয় নিয়ে মানুষের সঙ্গে হরহামেশাই তর্ক-বিতর্ক হয়। ধীরে ধীরে কাজ শিখে গিয়েছি। এ বিষয়গুলোতে এখন অভ্যস্ত। স্থানীয়ও আমার কাজে সহায়তা করে। কোনো সমস্যায় পড়লে তারা নিজেরাই এগিয়ে এসে আমার পক্ষে দাঁড়ায়।কাজ করতে গিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় জানিয়ে তানজি বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক ভালো-খারাপ মন্তব্য শুনতে হয়। গেট খুলতে একটু সময় নিলেই অনেকে বলেন, আমি মেয়ে বলে কাজ পারি না। এই লেভেল ক্রসিংয়ে দুটি গেট। একটি গেট খুলে অন্য গেটের দিকে যেতে স্বাভাবিকভাবে ২-৩ মিনিট সময় লাগে। এটুকু সময় অনেকে অপেক্ষা না করে মন্তব্য করে বসে। অনেক সময় মানুষের কথায় খারাপ লাগে। শুরুর দিকে এই বিষয়গুলো বেশি সম্মুখীন হয়েছি। এখন আর সমস্যা হয় না।‘নিজের যোগ্যতায় আমি চাকরি পেয়েছি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে এমন মন্তব্য করে মেয়েরা সবকিছুই করছে। ছেলেরা কাজ পাচ্ছে না মেয়েদের জন্য। আমি তাদেরকে বলি আমি যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েছি। আমি যখন চাকরি পায় তখন রাজশাহী রেলওয়ে ৮৫১ জনকে নিয়োগ দিয়েছিল। তার মধ্যে ৫১ জন ছিল নারী। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে আমরা চাকরি পেয়েছি। ছেলেদের বাদ দিয়ে আমাদের নিয়েছে এমন নই। যে যোগ্য তাকে নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমাজে ভালো মানুষ যেমন আছে, খারাপ মানুষও আছে। কারো মন্তব্যে কানে না দিয়ে নিজের কাজ করে যাওয়াই উত্তম। কে কি বলছে সেটা দেখার দরকার নেই। আমি কি করছি, কি ভাবছি, সেটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ।তানজিলার বিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি থাকলে সব কাজই করা সম্ভব। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের নারীরা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে। কাউকে হয়তো তার পরিবার পাড়া-প্রতিবেশীরা সহায়তা করে না কিংবা স্বামী সহায়তা করে না। আমার স্বামী আমাকে সহায়তা করেছে বলে আমি এই কাজ করতে পারছি। কিন্তু সবার স্বামী তো এমন না। মেয়েদেরও কাজে সুযোগ দেওয়া উচিত। মেয়ে বলে যে কিছু করতে পারবে না, এমনটা ভাবা উচিত না। ইচ্ছে থাকলে সবই সম্ভব।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

পবিপ্রবি র‌্যাগিংয়ে আহত পাঁচ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি

বড়াইগ্রামে নির্যাতিত আ’লীগ কর্মীর বাড়িতে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী