একুশ মানে মাথা নত না করা

একুশ মানে মাথা নত না করা

নিজস্ব প্রতিবেদক : কিসের ভয়, সাহস প্রাণ….একুশ মানে মাথানত না করা। আজ বৃহস্পতিবার মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারির এগারো তম দিন। মাস জুড়েই দেশের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হবে সেই অমর গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…’। মায়ের মুখের ভাষা বাংলাকে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে বীর সন্তানেরা ১৯৫২ সালের এই মাসে সারাদেশে গড়ে তুলেছিলেন এক অগ্নিঝরা আন্দোলন। বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভাষার অধিকার। বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন একাধারে যেমন ছিল রাষ্ট্রীয় জীবনে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, তেমনি এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি তাঁর জাতিসত্তা ও আপন সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতিও সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়। যে কারণে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে এক অনন্য প্রেরণার উৎস।
ভাষার মাসেই দেশের সর্বত্র বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে থাকে উৎসবমুখর। সৃজনশীল ও উদ্দীপনাময় আমেজ বিরাজ করে সবখানেই। এখানেই শেষ নয়, এখন আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালন করা হয় বেশ সাড়ম্বরেই। এছাড়া বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরা নিজ ভাষার মর্যাদায় আয়োজন করে থাকে নানা অনুষ্ঠানের।
প্রথম দিন থেকেই পাল্টে গেছে নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। প্রতিদিনের রুটিনে নতুন করে যোগ হয়েছে অনেক কিছু। দিনের কাজের শেষে বাংলা একাডেমি অভিমুখে হাজারো মানুষের ভিড়। প্রতিদিনই দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। গত ১০ দিনে বেশ ভালো বেচাকোনও হয়েছে বাই মেলায়। বইপ্রেমী পাঠকের পদচারণায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এখন মুখরিত নানা উৎসবের আয়োজনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা উৎসব। দেশি-বিদেশী কবিদের পদচারণায় উৎসব পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এই কবিদেরই চরণধূলি গিয়ে পড়ছে আবার একুশের বইমেলায়। আজ একুশে বইমেলারও ১১তম দিন। বিকেল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকছে বিভিন্ন লেখকের নতুন বইয়ের প্রকাশনা। লেখক কবিদের আড্ডা তো আছেই।
পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঙালী সন্তানেরা যে আন্দোলন করে তা শুধু মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য করেনি। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পাশাপাশি বাঙালী জাতির সংস্কৃতি রক্ষাও ছিল রফিক, সালাম, বরকতদের উদ্দেশ্য। কারণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে বাঙালীদের মুখে তুলে দিতে চায়নি। একই সঙ্গে এই বঙ্গের মানুষের জীবনমানসহ পুরো সংস্কৃতির চেহারা পাল্টে দিতে চেয়েছে। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা পাকিস্তানীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। চার ফেব্রুয়ারি ঢাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ধর্মঘট শুধু ঢাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ডাকা হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ধর্মঘট বাংলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পালন করে। তৎকালীন প্রকাশিত পত্রপত্রিকা থেকে এমনটি জানা যায়। দেশের মানুষের মধ্যে এমন চেতনা আরও উৎসাহিত করে বাংলাভাষার পক্ষে আন্দোলনকারীদের।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন