কলকাতা: কলকাতার উৎসব পঞ্জিকায় গত দুই বছর ধরে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। এই মহামারির বছরেও সেটা থেমে থাকেনি।তৃতীয়বারের মতো হওয়া এ উৎসবে স্বস্তি ফিরেছে কলকাতার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। বাংলাদেশের ৩২টি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নিয়ে এ উৎসব শুরু হলো। গতবছর চলচ্চিত্রের সংখ্যা ছিল ২২টি। কলকাতা নন্দন-১ এর সুসজ্জিত প্রেক্ষাগৃহে শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পাঁচদিনব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ উৎসব-২০২১ এর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি জৈবপ্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। কলকাতার উপ-হাইকমিশনের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড, মো. মোফাকখারুল ইকবাল, প্রথম সচিব সচিব (প্রেস)।প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর যৌথভাবে ভারত-বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তৈরির কাজ হচ্ছে। যা আগে ছিল না। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যা কিছুই ঘটুক না কেন সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিভেদ করতে পারে না। আমাদের আসল পরিচয় আমারা বাঙালি। আমাদের মধ্যে আরও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। এতে দুই বাংলার নৈকট্য আরো বাড়বে।ব্রাত্য বসু বলেন, সমাজে উন্নয়নের জন্য শিল্প ও সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতি আনা ঠিক নয়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা বিশ্বে এক অনন্য সম্পদ বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, এবছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর এবং ভারত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও পঞ্চাশ বছর। ভারত-বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তে গড়া। তাই এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়। ‘২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুজকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। দুই দেশের গোয়েন্দা বিভাগ এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। ফলে ভারত ও বাংলাদেশের সেনারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে। আমি মনে করি, দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আরও বাড়াতে হবে। ’তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য অনেক মানুষ আসেন। আমি যখন বাংলাদেশে ভারতের নিযুক্ত হাইকমিশনার ছিলাম তখন বছরে ৫ লাখ ভিসা দেওয়া হয়েছিল। দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় যে চলচ্চিত্র হচ্ছে তা অভিনন্দনযোগ্য। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমি মনে করি কলকাতা ভারতের অন্যতম সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, যা দুই বাংলার কাছে গর্বের। কিছুক্ষণ আগেই অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে একটি চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়েছে। আজ তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে। এটা শুধু কলকাতাকেন্দ্রিক করে না রেখে এই উৎসব বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে।চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বাংলাদেশের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা জানান। তিনি জানান, তিনি মোট তিনটি চলচ্চিত্র যৌথ প্রযোজনায় তৈরি করেছেন।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক জন্মসূত্রে ছিলই, বর্তমানে পরিণয়সূত্রেও সেই সম্পর্ক বিদ্যমান। চলচ্চিত্র উৎসবের প্রদর্শিত ছবির তালিকা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু অসাধারণ ছবি আমারা দেখতে পারবো। চলচ্চিত্র উৎসবে ভারতের চলচ্চিত্র জগৎ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, চিত্রনায়ক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও নায়িকা মুমতাজ সরকার। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রনায়ক রিয়াজ, চিত্রনায়িকা জয়া আহসান, অভিনেত্রী মিথিলা প্রমুখ।বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার সহযোগিতায় ৫-১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তৃতীয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’ কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্র সদনের নন্দন -১, ২ ও ৩ এর প্রেক্ষাগৃহে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী পর্বে ‘হাসিনা এ ডটারস টেল’ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। পরে ন ডরাই, গণ্ডই, আয়নাবাজি, জন্মসাথী, কৃষ্ণপক্ষ, জালালের গল্প, দেবী, হাসিনা এ ডটারস টেল, মায়া দ্য লস্ট মাদার, বাপজানের বায়স্কোপ, রাজাধিরাজ রজ্জাক, একাত্তরের গণহত্যা ও বধ্যভূমি, কাঙ্গাল হরিনাথ, আবার বসন্ত, ছুয়ে দিল মন, হীরালাল সেন, অজ্ঞাতনামা, সত্ত্বা, মুসাফির, শাটল ট্রেন, ইতি তোমারই ঢাকা, আন্ডার কনস্ট্রাকশন, পদ্ম পাতার জল, ইন্দুবালা, আঁখি ও তার বন্ধুরা, অন্তর জ্বালা, ফাগুনের হাওয়ায়, ইসমাইলের মা, কাঠবিড়ালি প্রদর্শিত হবে।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও স্বপ্না দে।