টিকা নিলেও সবার স্বার্থে মাস্ক পরতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

টিকা নিলেও সবার স্বার্থে মাস্ক পরতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যারা টিকা নিয়েছেন বা নেবেন, সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে তাদেরকেও মাস্ক পরা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এবং একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান। মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছেন, তাদেরকেও কিন্তু মাস্ক পড়ে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। এটা নিজের জন্য বা অন্যের জন্য এটা দরকার, সেটা ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা করবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সারাবিশ্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সকলকেই নিরাপদ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। অতি সংক্রামক নতুন করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য শুরু থেকেই মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারও ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে, যদিও অনেকে নানা অজুহাতে তা মানছেন না। ইতোমধ্যে দেশের করোনাভাইরাসের টিকা এসেছে এবং প্রাথমিকভাবে পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর তা প্রয়োগও করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণ টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। টিকা আসায় এখন মানুষের মধ্যে মাস্ক পরা বা হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব রক্ষার মত স্বাস্থ্যবিধি পালনে যাতে ঢিলেমি না আসে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও সতর্ক করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সংসদ টেলিভিশন এবং অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত থাকে। আল্লাহর রহমতে করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আসলেই আমরা স্কুল কলেজ সব খুলে দেব। দেশের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও সংসদে তুলে ধরেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যে যাই বলুক। সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ‘নানাভাবে নানা অপপ্রচার’ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এটা বিশ্বাস করি যে সততা নিয়ে কাজ করলে পরে আর সেই কাজের সুফলটা যখন জনগণ পায়, সেখানেই হচ্ছে তৃপ্তি, যে না, জনগণের জন্য কিছু করতে পারলাম। আর কেউ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, অবশ্যই একটা দেশকে উন্নত করা যায়। শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেটার প্রশংসা তো দিতেই পারল না, উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে কেউ উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কিসে মাননীয় স্পিকার? যদি নৌপথে যেতে হয়, তাহলে নৌকা বাৃ নৌকায়ই যেতে হবে বাৃ উপায় তো নাই। হ্যাঁ নৌকায়ই চড়তে হবে। আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোনো অসুবিধা নাই। আমাদের নৌকা অনেক বড় সবাইকেই নেব। তবে বেছে নেব, কেউ নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে, সেটাও দেখব। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য এবং হাসি পায় যে যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ, যারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের কারাবরণ করতে হয়, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে সেই মামলা, গ্রেনেড হামলার মত প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী দলকে হত্যা বা আমাকে হত্যার যে প্রচেষ্টা, সেই মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত এরা যখন কোনো দলের নেতৃত্বে থাকে, সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে? আপনি বলেন মাননীয় স্পীকার। বিএনপিরও তো আজকে সেই দশা। তাদের নেতৃত্বের অভাব। তারা এখানে যতই বক্তৃতা দিক. আর যতই কথা বলুক। এই ধরনের সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতা, তাদের উপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যেহেতু সেবা পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে। সরকার ‘পরিকল্পিতভাবে’ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সুফল এদেশের মানুষ পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। কেউ ঠিকানাবিহীন থাকবে না- এটা সরকারের লক্ষ্য। আমরা গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে ব্যারাক হাউস করে সেখানে মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি শাসনামলে যারা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজারে পড়ে ছিলেন, তাদেরও আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ফ্ল্যাটবাড়ি করে দেওয়ার কথা সংসদে তুলে ধরেন তিনি। মুজিববর্ষ সামনে রেখে মাত্র কিছুদিন আগেই আমরা ব্যারাক হাউজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছোট ছোট ঘর, দুই কামরা বিশিষ্ট আলাদা ঘর এবং দুই কাঠা জমি দিয়ে সেখানে ৬৬ হাজার মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। আরো এক লাখ মানুষের ঘর তৈরির কাজ চলমান আছে। যেখানে আমরা খাস জমি পাচ্ছি, সেখানে দিচ্ছি। আর যদি না হয়, আমরা জমি কিনে তাদেরকে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ৫৬০টি মসজিদ তৈরির কার্যক্রম চলছে, যেখানে ইসলামিক সংস্কৃতির চর্চা ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মটা সঠিকভাবে মানুষ জানুক এবং সেটা চর্চা করুক, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ মসজিদগুলো নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে

জোরপূর্বক পদত্যাগের পর স্ট্রোকে মারা গেলেন হাজেরা তজু কলেজের উপাধ্যক্ষ