ব্যবসায়-বাণিজ্যে করোনার প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। শিল্পোদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজসহ অন্যভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কলকারখানা চালু রাখলেও ক্রেতাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। করোনা-পরবর্তী অবস্থা উত্তরণে চেষ্টা করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। আর ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভাবিয়ে তুলছে ব্যবসায়ীদের।এর ফলে রপ্তানি কমসহ দেশের শিল্প খাত খারাপ অবস্থার দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এমন অবস্থায় ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানো না হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে।ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে দাঁড়ায়। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খরচ ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়ে কোনো রকমে টিকিয়ে রেখেছিলের। তখন সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে, যা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি দেয়। এখনো পরিস্থিতির যেহেতু খুব বেশি উন্নতি হয়নি, সেজন্য এই সুবিধা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।তারা বলেছেন, অতীতেও ক্ষেত্রেবিশেষে ঋণ পরিশোধে লম্বা সময় দেওয়া হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তাই এ সুবিধা নিয়ে অনেক বেশি সময় ধরে ঋণ পরিশোধ করেছেন। কিস্তির আকারও তাতে ছোট ছিল। এবারের করোনায় সবার ক্ষেত্রেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়িয়ে দিলে উদ্যোক্তা যেমন বাঁচবে, ব্যাংকও সুবিধা পাবে। আর সময় না বাড়ালে উদ্যোক্তারা যদি ঋণ পরিশোধ না করতে পারেন, তাহলে খেলাপির হার বাড়লে বিপাকে পড়বে ব্যাংকগুলো। তাই ব্যাংকের বিনিয়োগের টাকা ফেরত দিতে সময় বাড়ানো দরকার। তবে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় ব্যাংকগুলোর এমডিরা সময় বাড়ানোর পক্ষে নন বলে মত দিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে তা কারো জন্যই সুখকর হবে না। তবে এর আগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আগামী জুন পর্যন্ত কিস্তি না দিলে সেই ঋণ খেলাপি না করার অনুরোধ জানিয়েছিল। এফবিসিসিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী মার্চ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধের জন্য সময় পাবেন বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শিল্প-বাণিজ্যে করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব ছিল মারাত্মক। সেটা এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধের সময় কত দিন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন, তা-ও নির্ভর করছে করোনার প্রভাবের ওপর। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলাম। এখন সময় যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে।’করোনা ভাইরাসে স্থবির অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে ঋণগ্রহীতাদের সুরক্ষা দিতে বিদায়ি বছরের এপ্রিলে ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এরপর এই ছাড়ের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে তৃতীয় দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে এই সুযোগ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক।