ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ ঘোষণা করা হয় গেলো বছরের মার্চ মাসে। সেসময় মাস্টার্স ও অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের অনেকের পরীক্ষা চলমান ছিল।আবার অনেকের ক্লাস শেষের দিকে হলেও পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকে বিসিএসসহ চাকরির পরীক্ষা আবেদন করতে পারছিল না। আবার মাস্টার্স পরীক্ষা বাকি থাকার কারণে শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হচ্ছিল অনেকের।এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে করোনার মধ্যেও পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ওঠে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।বিষয়টি আমলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল হল বন্ধ রেখে ডিপার্টমেন্ট চাইলে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়। কিন্তু ঢাকা শহরে পরীক্ষা দিতে আবাসন সমস্যার কারণে হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ছাত্রসংগঠনগুলো আন্দোলন শুরু করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি থেকে সরে আসে। সবশেষ ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় শুধু মার্চ মাসে পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরীক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।গেলো বছরের মার্চ মাসের ১৮ তারিখ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের সবশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে ১৭ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে ১৮ মার্চে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিতে চায়নি। যার কারণে ২০১৪-১৫ সেশনের এ শিক্ষার্থীদের একটি পরীক্ষার কারণে সবকিছুই বিলম্বিত হলো।পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিমত জানতে চাইলে শিহাব উদ্দীন বলেন, আমরা এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ ঢাকা শহরে সবার আত্মীয় নেই। থাকলেও সেখানে থাকে পরীক্ষা দেওয়ার মতো পরিবেশ থাকে না। হলে থাকলে রিডিংরুমে নিশ্চিন্তে অধ্যয়ন করা যায়। আবার কোনো কিছু না বুঝলে বন্ধুদের সহযোগিতা নেওয়া যায়। শুধু একটি পরীক্ষার কারণে আমরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আশা করি দ্রুতই হলে উঠে পরীক্ষা দিতে পারবো।অপরদিকে ২০২০ সালে মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়েছে মাত্র দুই মাস হয়েছে। তাদের পুরো সেমিস্টার কেটেছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই ব্যাচের শিক্ষার্থী নুর হোসেন বলেন, পরীক্ষাটা দ্রুত হয়ে গেলেই হয়। কারণ আমাদের চাকরির পড়া আর পরীক্ষা-ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন পরীক্ষাটা হলেই আমরা ভালোমতো চাকরির প্রস্তুতি নিতে পারবো।অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনির উদ্দীন বলেন, আমাদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে ভালো। চাকরির আবদেন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবো। তবে পরীক্ষার পরে আবার হল ছাড়তে হলে আমাদের পড়াশোনার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। সে কারণে আমাদের ব্যাচের দাবি হল খুলে দেওয়া হোক। আমরা রিডিং রুমে পড়তে চাই।পরীক্ষার্থী ছাড়া বাকি শিক্ষার্থীরাও হল খোলার জন্য মত দিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুন বলেন, দু’টি সেশনের জন্য হল খোলার সিদ্ধান্ত অন্য সেশনের সঙ্গে এক ধরনের বৈষম্য। কী কারণে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানি না। যদি সম্ভব হয়, তবে সবার জন্য হল খোলা হোক।তৃতীয় বর্ষের সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, হল সম্পূর্ণ খুলে না দিলেও সামান্য কিছু সময়ের জন্য খুলে দেওয়া উচিত সবার জন্য। কারণ হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার পর আবার হল বন্ধ করে দিতে পারে। চাইলে কোনো এক ব্যাচের জন্য হল খুলে দিলো এরপর তাদের পরীক্ষা আর ভাইভা শেষে তারা হল থেকে চলে গেলো এরপর আবার নতুন ব্যাচ আসলো। আর সব স্টুডেন্টদের তো ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই হল না খুলে পরীক্ষা নিলে অনেকের থাকার সমস্যা হবে।করোনার ঝুঁকি থাকলেও শিক্ষা ও চাকরিজীবনের কথা ভেবে নিউ নরমাল লাইফ সঙ্গী করে এগিয়ে যেতেই প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অফিস-আদালত-মার্কেট সব খোলা থাকলেও শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় কোনো সমাধান দেখছেন না তারা। হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু তাই ইতিবাচকভাবেই দেখছেন শিক্ষার্থীরা।