পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ নিয়ে বিপাকে শাহজালাল বিমানবন্দর

পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ নিয়ে বিপাকে শাহজালাল বিমানবন্দর

সুজাউদ্দিন রোমেন : ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জানিক বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে এক ডজন পরিত্যক্ত বিমান বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওসব উড়োজাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে আমদানি-রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে ও রানওয়েতে বিমানগুলো ফেলে রেখে। ইতিমধ্যে ওসব প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়নি। পরিত্যক্ত ওসব বিমান সরিয়ে সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। সিভিল এভিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো কার্গো ভিলেজের সামনে ও রানওয়ে থেকে সরিয়ে উত্তর দিকে অবস্থিত বে-তে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজগুলোকে পার্কিংয়ের জায়গা দিতে কর্তৃপক্ষকে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া সিভিল এভিয়েশনকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ওঠানামায় কার্গো বিমানগুলোকে জায়গা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পড়ে থাকা বিমানগুলোর কারণে ওই কাজে সমস্যা হচ্ছে। ফলে এখন সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আগামী জুনের মধ্যে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলাম কিংবা বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দর পরিত্যক্ত বিমানগুলো পড়ে থাকায় বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ওসব এয়ারলাইনসের কাছে হ্যান্ডেলিং চার্জ হিসেবে কয়েকশ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু ওই পাওনা আদায়ে অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে। তবে নিলামে বিমানগুলো বিক্রি করা হলে সেখান থেকে কিছু টাকা পাবে বেবিচক। পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৮টি, জিএমজি এয়ারলাইনসের একটি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি, অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ রয়েছে। ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ওসব বিমান বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে। ফলে ভাড়া বাবদ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোনো ঘোষণা না দিয়েই ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার। ওই এয়ারলাইনসটি ২০০৫ সালে বেবিচকের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০০৭ সালের ১০ জুলাই ফ্লাইট অপারেশন শুরু করেছিল। বেবিচক দেশের বিমানবন্দরগুলো থেকে এয়ারলাইনসটির বিমান সরানোর জন্য একাধিকবার নোটিশ করলেও কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাছাড়া মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ এয়ারপোর্টে এয়ারলাইনসটির একটি বিমান দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর সরানোর উদ্যোগ না নেয়ায় ২০১৮ সালের আগস্টে সেটিকে রানওয়ের পার্কিংলট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জিএমজি এয়ারলাইনস। ওই এয়ারলাইনসটি বিমানবন্দর থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণ দেখিয়ে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। যদিও দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এয়ারলাইনসটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর রিজেন্ট এয়ারওয়েজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেবিচক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া না গেলে কেজিদরে বিক্রি করা হবে উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান জানান, দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে ১২টি বিমান রাখা ছিল। ওই কারণে কার্গো ভিলেজের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো রপ্তানি কার্গো ভিলেজের সামনে থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে কার্গো ভিলেজের খালি জায়গা বেড়েছে। বেবিচক কর্তৃপক্ষকে ওসব পরিত্যক্ত বিমান নিলাম ও ক্রোকের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন বেবিচকের সিদ্ধান্তের ওপর তা নির্ভর করছে।
এ প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, এখন পরিত্যক্ত বিমানগুলো কার্গো পার্ক ও রানওয়ে থেকে পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ বিমানগুলো যে স্থানে রাখা ছিল সেখানের কর্মকান্ডে সমস্যা হচ্ছিল। রপ্তানি পণ্য নিতে আসা বিদেশি বিমানগুলোকে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ওই পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো আগামী জুনের মধ্যেই নিলাম বা বাজেয়াপ্ত করে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি বিমানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে। এখন যে কোনো সময় নিলামে তোলা হবে বা স্ক্র্যাব হিসেবে ধ্বংস করে ফেলা হবে। বিমানগুলো নিলামে তুললে টাকাটা সরাসরি সিভিল এভিয়েশনের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। কারণ তাদের কাছে বহু টাকা পাওনা রয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন