দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে উপজেলা পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে উপজেলা পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য দেশের উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে দেশের ৮ বিভাগে প্রথম পর্যায়ে ৭১টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ওই কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আর চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হয়ার কথা রয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদফতর। পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মূলত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গণপূর্ত অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতেই উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশে যাতে দক্ষ জনশক্তি রফতানি করা যায় তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন দক্ষতা। সেজন্য প্রকল্পটি গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮ বিভাগের ৭১ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে কাজ চলছে। পরে দেশের সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বাকি উপজেলার কাজগুলোর বিষয়ে ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে অভিবাসনে পিছিয়ে পড়া উপজেলাগুলোতে আগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তাছাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য মন্ত্রী-এমপিরা ডিও লেটারও দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আগে কোন কোন উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে ওই তালিকা দিয়েছে গণপূর্ত দফতরে। আর ওই তালিকা ধরেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৪৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। ওসব কেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নতুন নতুন ট্রেড চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিশ্ব শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি ছাড়া অদক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেজন্য দেশের সব জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। ওই কারণেই দক্ষ কর্মী তৈরির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশের সব জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিভাগওয়ারি যে সব উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে তা হচ্ছে- ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুরের জাজিরা, ডামুড্যা ও নড়িয়া। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, রাজবাড়ীর পাংশা, মাদারীপুরের শিবচর, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও ফরিদপুরের চরভদ্রাসন। ময়মনসিংহ বিভাগে গফরগাঁও, ত্রিশাল, মুক্তাগাছা, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা ও মোহনগঞ্জ, জামালপুর জেলার ইসলামপুর, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর। চট্টগ্রাম বিভাগের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, পটিয়া। কুমিল্লা জেলার বরুড়া, লাকসাম। খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, কক্সবাজারের চকরিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, ফেনীর সোনাগাজী। রাজশাহীর বিভাগের রাজশাহী জেলার বাগমারা ও বাঘা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও কাজীপুর, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পত্নীতলা ও বদলগাছি, নাটোরের বাগাতিপাড়া, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর, গাইবান্ধার সাঘাটা, নীলফারীর জলঢাকা, পঞ্চগড়ের আটওয়ারী, দিনাজপুরের বিরল, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম। খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার কয়রা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, কুষ্টিয়ার খোকশা, মাগুরার শালিখা, মেহেরপুরের মুজিবনগর, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, নড়াইলের লোহাগড়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর। সিলেটের ছাতক, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ। বরিশাল বিভাগের উজিরপুর ও মেহেন্দিগঞ্জ, ভোলা জেলার চরফ্যাশন, পিরোজপুরের নেছারাবাদ ও নাজিরপুর, ঝালকাঠির রাজাপুর ও বরগুনার তালতলী।
এদিকে ইতিমধ্যে মানিকগঞ্জে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে যুগোপযোগী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নতুন নতুন ট্রেড চালুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে একটি বিশেষায়িত বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশকে ভালবাসে বলেই প্রবাসী কর্মীরা দেশে বিপুল অংকের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। আর যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে অধিক সংখ্যক দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিটেন্সের উর্ধগতি অব্যাহত থাকবে। তাছাড়াও যেসব জেলা থেকে কম সংখ্যক কর্মী বিদেশে যায়, সেসব জেলা থেকে সরকার অধিক সংখ্যক দক্ষ কর্মী বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আইসিটি খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করার জন্য সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। আইসিটি বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের এই চুক্তি নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ গার্মেন্টস শিল্প অথবা অন্য কোন শিল্প দিয়ে শুরু করলেও আজ সব দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এদেশকেও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমানতালে চলতে হবে। তাহলেই দেশের মানুষ ও দেশ এগিয়ে যাবে। সব উপজেলা পরিষদে নবনির্মিত কমপ্লেক্স ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করে ৫ম/৬ষ্ঠ তলায় চার হাজার বর্গফুট ফ্লোর এরিয়া নিয়ে প্রশিক্ষণ সেন্টার করা হবে। ওই সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরি করাই হচ্ছে এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রণ্ট নীলফামারী সদর ও পৌর শাখার আহবায়ক কমিটি গঠন

অস্ত্রসহ জেল পলাতক আসামী গ্রেপ্তার