নিজস্ব প্রতিবেদক : দিন দিন ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। মূলত সহজে আর্থিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়াই ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের কল্যাণে এক হিসাবের লেনদেন দেশের যে কোনো শাখায়, নানা রকম বিল পরিশোধ, কম্পিউটার বা মুঠোফোনে হিসাব পরিচালনা, টাকা পাঠানো, অনলাইন কেনাকাটা ব্যাংকের অনেক কাজই এখন যে কোনো জায়গা থেকে যখন-তখন করা যাচ্ছে। ফলে জীবনযাত্রাও অনেক সহজ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চেক ক্লিয়ারিংয়ের পরিমাণ মোট ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তবে ৫ বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ২৯ হাজার ৮৯৮ কোটি ৫০ লাখ। তার মধ্যে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৮৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু ৫ বছর আগে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় অর্ধেক। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮১৭ কোটি ৪০ লাখ। ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে রয়েছে এটিএম, সিআরএম, পিওএস ও ই-কমার্স-ভিত্তিক লেনদেন।
সূত্র জানায়, এটিএম বুথে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমের লেনদেনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। কারণ ২০১৬ সালে এটিএম বুথে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৬৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। তবে সদ্যসমাপ্ত বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ওই লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তাছাড়া ২০২০ সালে ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৩৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ৫ বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৮৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ এসে পোঁছেছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকায়। ৫ বছর আগে যার পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৮৬ কোটি ৪০ লাখ। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু ৫ বছর আগে ওই লেনদেনের পরিমাণ ছিল অর্ধেকেরও কম। বিগত ২০১৬ সালের প্রথম ৯ মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ২৭ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা লেনদেন হয়।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেন হয়েছে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা ২০১৬ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ৫ বছর আগে ২০১৬ সালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মধ্যে রয়েছে চেক ক্লিয়ারিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো উপাদানগুলো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমকেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিং বলে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট-এ যুক্ত হয়ে ব্যাংকের নির্দিষ্ট সুরক্ষিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে। অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য ব্যাংক গ্রাহককে প্রয়োজনীয় তথ্য (সাধারণত একটি আইডি ও পাসওয়ার্ড) সরবরাহ করা হয়। গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুতে কাগুজে মুদ্রার অনলাইন ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়।
এদিকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড সেবা ও মোবাইল ব্যাংকিং- ওই তিন মাধ্যমে ব্যাংকিংসেবা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে যে কোনো ব্যাংকে টাকা পাঠানো, পরিষেবা মাশুল, টিকিট কেনা, স্কুল বেতন, প্রতি মাসের কিস্তির টাকা দেয়াসহ সব ধরনের ব্যক্তিগত লেনদেন করা যাচ্ছে। আর যে কোনো সময়ের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং তো রয়েছেই। ওসব সেবার নিরাপত্তা বাড়াতে দিনে দিনে যুক্ত হয়েছে আঙুল ও চোখের মাধ্যমে গ্রাহক যাচাই, কিউআর কোড, ব্লক চেইনসহ নানা প্রযুক্তি।