নিজস্ব প্রতিবেদক : ফিরে দেখা: ২০২০ সালে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন। গত ১০ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৪১ নম্বর স্প্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ২২টি জেলার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বিজয়ের মাসে এটি ছিল বাঙালি জাতির আরেকটি ঐতিহাসিক বিজয়।
আয়তন ও নির্মাণ ব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। দেশের প্রথম দ্বিতল এই সেতুর ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচতলায় চলবে ট্রেন। মাওয়া আর জাজিরাকে সংযুক্ত করবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে, হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। এর ফলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। সেই সম্ভাব্যতার ওপর ভিত্তি করে ২০০৭ সালে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় হবে পদ্মা সেতু। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে বছরেরে সেপ্টম্বরে এক ঘটনায় উল্টে যায় পাশার দান। সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংকের দেখাদেখি বিদেশি ঋণদাতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও অর্থ প্রদান স্থগিত করে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা এবং তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ অনেকের বিরুদ্ধে। তবে তা ধোপে টেকেনি।
বিশ্ব ব্যাংক অর্থ প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলে ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জনগণের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
পদ্মা সেতুর এই ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি ছিল প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ ও নানা বাধা-বিপত্তি। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরস্রোতা নদী পদ্মা, নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠনের জটিলতার কারণে অনেক বার পিছিয়ে যায় স্প্যান বসানোর কাজ।
২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয় মূল সেতুর কাজ। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মূল সেতুর নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তখন অনেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণকে দিবাস্বপ্ন কিংবা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে একটা একটা করে স্প্যান বসানোর কাজ চলছিল। সেতু সংশ্লিষ্ট সবার নিরলস পরিশ্রমে পূর্ণাঙ্গ রুপ পায় পদ্মা সেতু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালে স্বপ্নের এই সেতু দিয়ে চলবে যানবাহন।