নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তালাবন্দি ক্লাসরুম আর বড় কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিলের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষ। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও সংসদ টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইনে ক্লাস সম্প্রচার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে বলে নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন। ভার্চুয়াল ক্লাসের সুবিধা কত ভাগ শিক্ষার্থী নিতে পারছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নানা মাধ্যমে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী এর আওতায় এসেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে।
দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ৯ মাস ধরে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল হচ্ছে না। চলমান সঙ্কটের কারণে চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাসহ ক্লাস পরীক্ষাও বাতিল করে সকলকে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এইচএসসি সমমান পরীক্ষা বাতিল করে অটোপাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নম্বর ও জিপিএ নির্ধারণের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এ চ্যালেঞ্জে আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। টিভি ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে অসমাপ্ত সিলেবাস শেষ করা হয়েছে। এতে আমাদের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছে। তাদের পঠন জ্ঞান যাচাইয়ে ১৮টি অ্যাসাইনমেন্ট করানো হয়েছে। ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী তা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিয়েছে। যারা এ কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদের বিশেষভাবে এগিয়ে নেয়া হবে।’
সচিব আরও বলেন, ‘বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অনলাইন ক্লাস নিয়মিত চালিয়ে নেয়া হবে। করোনার কারণে দুটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের গতি বহাল রয়েছে।’
অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট
২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কার্যক্রম চালু করা হয়। এছাড়া এপ্রিল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৩০ কর্মদিবসের একটি পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের পঠন জ্ঞান অর্জনে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য সপ্তাহে ৩টি করে মোট ১৮ টি অ্যাসাইমেন্ট তৈরি করা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ
দীর্ঘ ১০ বছর স্থগিত থাকার পর নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে দুই হাজার ৬৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ এক হাজার ৬৪৬টি, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৮৪টি ও মাদরাসা ৫০২টি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকল বৃত্তি কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। দেশের সকল বিদ্যালয়ে ১০০টি করে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ১৩০ রকমের সেবা প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত ১০০টি নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
চলতি বছর ৫০২টি মাদরাসা এমপিওভুক্তি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২০ প্রণয়ন প্রস্তাব জাতীয় সংসদে প্রক্রিয়াধীন, বিএমটিটিআই নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে প্রক্রিয়াধীন, মাদরাসা শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫২টি মডেল মাদরাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কারিগরি-মাদরাসা শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে বড় ট্রেডগুলোকে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে চাকরিদাতাদের যুক্ত করা হচ্ছে। এর সুফল আমাদের শিক্ষার্থীরা পাবে। বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় করে কারিগরি শিক্ষার মান বাড়ানো হচ্ছে।