বিজয় নিশান উড়ছে ঐ… 

বিজয় নিশান উড়ছে ঐ… 
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা দিলেন বিজয়ের। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয়ের সেই শুভক্ষণের ৪৯তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের সেই বিজয়ক্ষণের সঙ্গে বলা যেতেই পারে- ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/ খুশির হাওয়া ঐ উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে/ মুক্তির আলো ঐ ঝরছে’।   দীর্ঘ নয় মাসের রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস। গৌরব আর আনন্দের দিন। একইসঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে বেদনাবিধুর দিনও। পাকিস্তানিদের ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনা শেষে বিজয়ের নতুন আলোয় সিক্ত হয়েছিলো এ বাংলার মাটি, জল। লাখো সন্তান, মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।   ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ব্রিটিশদের কাছে নবাব সিরাজউদৌল্লার পরাজয়ের পর স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তার নবউদয় হয় একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। সোয়া দুইশ বছরের শোষনকাল পেরিয়ে বাঙালি পায় তার নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র।   আবদুল লতিফ গানের সুরে বলেছিলেন- ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/ কারোর দানে পাওয়া নয়,/ আমি দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি/ জানা আছে জগৎময়,/ আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’। এ গানেই যেমন বর্ণিত হয়েছে বাঙালি কারো দানে নয়, নিজের বুকের রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিলো আপন ভূমি।   মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবি নিয়ে বাঙালি তারুণ্য রাজপথে নিজের রক্ত দিয়েছিলো। সেদিন থেকেই স্বাধিকার আদায়ের লড়াই পরিণত হয় স্বাধীনতার। ১৯৬৬ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার ঘোষণার মাধ্যমে তৈরি হয় স্বাধীনতার রূপকল্প।যার চূড়ান্ত রূপ হিসেবে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা ডাক দিলেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরপর  ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তান বাহিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত বাঙালির উপরে। জাতির পিতার ডাকে উদ্বুত্ত বাঙালি নয় মাসে অর্জন করে বিজয়। যার জন্য প্রাণ দিতে হয় ত্রিশ লাখ মানুষকে। সম্ভ্রম হারায় দুই লাখেরও অধিক মা-বোন।   বাঙালি জাতি এখন এক অন্যরকম স্বস্তিতে বিজয় দিবস উদযাপন করে। দীর্ঘ সময় পরে হলেও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। যাতে সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষের মনে এসেছে স্বস্তি। জাতির কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালিত হবে মহান বিজয় দিবস। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে না। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।বিজয় দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বাণী প্রদান করেছেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজাদ কাশ্মীরে বিক্ষোভ, নিহত ৪

বিএনপি ইসরায়েল-নেতানিয়াহুর দোসর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী