নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য অনবরত দিতে থাকলে সরকার নিশ্চয় বসে থাকবে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাস্কর্যকে মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে সমাজকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা ইসলামি দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভাস্কর্য আছে। ইরাকে রাস্তায় রাস্তায় ভাস্কর্য আছে, তুরস্কে এরদোয়ানের ভাস্কর্য আছে এবং পৃথিবীর অন্যান্য ইসলামিক দেশ যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে যদি তাকাই, সেখানে রাস্তায় রাস্তায় ভাস্কর্য আছে। সেই সৌদির জেদ্দাসহ বিভিন্ন শহরে ঘোড়া, উটসহ সৌদি প্রশাসকদের ছবি সংবলিত ভাস্কর্য আছে। এ ছাড়া জেদ্দায় পৃথিবীর বিখ্যাত ভাস্কর্য দিয়ে স্কাউচার মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নারী-পুরুষ, জীবজন্তুর ভাস্কর্যসহ বহু কিছুর ভাস্কর্য সেখানে আছে। এবং মাওলানা রুমিসহ বহু স্কলারের ভাস্কর্য আছে। তিনি বলেন, ভাস্কর্য একটি দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি কালচারের অংশ। এ সমস্ত দেশে এমনকি সৌদি আরবেও এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেননি। যারা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের অতীত ইসিহাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে, তাদের পূর্বপুরুষরা যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের জন্য লড়াই করেছিলেন বা পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। তাদের সেই স্বাদের পাকিস্তানের কায়েদে আজমের ভাস্কর্য আছে, লেয়াকত আলীসহ বহুজনের ভাস্কর্য আছে। সেখানেও কেউ প্রশ্ন তোলেননি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বহু ভাস্কর্য বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছে, তখন কিন্তু কেউ প্রশ্ন উপস্থাপন করেনি। এখন এটি নিয়ে প্রশ্ন করা মানে এটি নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই ভারতবর্ষে যখন ইংরেজরা শাসন ক্ষমতা নিল তখন ভারতবর্ষে ইংরেজরা আসার আগে ভারতের সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। সেনাবাহিনীর মধ্যে উর্দু ভাষা চালু করা হয়েছিল। যখন ইংরেজরা ভাররতবর্ষ শাসন করা শুরু করল তারা ইংরেজি চালু করলেন, সরকারি ভাষা হয়ে গেল ইংরেজি। তখন এই ভারতবর্ষে আজকে যারা ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলছেন তাদের মধ্যে অনেকে ইংরেজি শিক্ষা হারাম ফতোয়া দিয়েছিলেন। মানুষ যখন চাঁদে গেল তখন ফতোয়া দিয়েছিলেন বিশ্বাস করলে হারাম, শিরক হবে, আবার যখন টেলিভিশন চালু হল তখন দেখা হারাম বলেছিলেন। অনেকেই হজে যাওয়ার সময় ছবি দিয়ে দরখাস্ত করা বা ছবি দেয়া যাবে না এটা নিয়ে বিতর্ক তুলেছিলেন। তিনি আরও বলেন, এখন যারা এ সমস্ত কথা বলছেন তারা টেলিভিশনে বক্তব্য দেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলে খুশি হন। আসলে এ সমস্ত কথা বলে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়। আমি আশা করব, এ ধরনের বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক বক্তব্য তারা পরিহার করবেন। এটি কখনও জনগণ মেনে নেয়নি নেবেও না। বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। এ বিষয়ে সরকার কী করছে- জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, এটির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জনগণ বক্তব্য দিয়েছে। এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য যদি অনবরত করতে থাকে সরকার নিশ্চয় বসে থাকবে না। আওয়ামী লীগ এ নিয়ে কথা বলতে দেরি করল কেন- জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য আসার দুই দিনের মাথায় আমি বক্তব্য দিয়েছি।
এদিকে নিবন্ধনের আবেদন করা যে সব অনলাইনের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি সেগুলোর ব্যাপারে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে যেগুলো রেজিস্ট্রেশনের জন্য যোগ্য বিবেচিত তাদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেকগুলো অনলাইনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা যেসব তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে সেটি সঠিক নয়। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে অফিসের ঠিকানায় অফিস পাওয়া যায়নি, আবার যে ওয়েবসাইট ডোমেইন দেয়া হয়েছে সেগুলো চালু থাকে না সেগুলোর যোগ্য বিবেচিত হয়নি। যোগ্য অনলাইনগুলোর তালিকা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল (গত রোববার) দ্বিতীয় দফায় দেশের প্রতিষ্ঠিত সবগুলো অনলাইন এ তালিকায় রয়েছে। কিছুকিছু হয়তো বাদ আছে তবে এটি অব্যাহত থাকবে কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে সব অনলাইনের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে শিগগিরই। তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া শেষ করার পর অর্থাৎ যারা আবেদন করেছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পর কেউ অনলাইন প্রকাশ করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এখন যেমন কোনো একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে হলে প্রথমে ছাড়পত্র নিতে হয় অনলাইনের ক্ষেত্রেও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর যারা আবেদন করেছে একই প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যে কেউ যেখানে বসে একটি অনলাইন পত্রিকা খুলে বসল, সেটি আসলে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিচালিত হয়, গুজব সৃষ্টির জন্য পরিচালিত হয় অথবা অনেক ক্ষেত্রে অসত্য সংবাদ দিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা হয় সেটি তো হতে দেয়া যায় না। আবার অনেকে অনলাইন খুলে সাংবাদিকতার কার্ড ধরিয়ে দেয়, তারা তো সাংবাদিক না। এখানে শৃঙ্খলা আনতে এ কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কিছু অনলাইন এখনো নিবন্ধন তালিকায় স্থান পায়নি এটি সঠিক। আরও কিছুদিন পর যাচাই করে আরও কিছু ছাড়পত্র দেয়া হবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।