ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে একটি গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে বলে মনে করছে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই এ নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামসহ দুই একটি ইসলামি দল বিরোধিতা শুরু করে। ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি নিয়ে এখনও সোচ্চার তারা। শুরুর দিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চুপ থাকলেও হেফাজতের আমির বাবুনগরীর বক্তব্যের পর এখন তারা চড়া সুরে কথা বলছেন। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আয়োজিত এক মাহফিলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আমি কোনো পার্টির নাম বলছি না, কোনো নেতার নাম বলছি না…। কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য স্থাপন করে, সর্বপ্রথম আমিই তা টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেব। ” এ বক্তব্যের পর শনিবার (২৭ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন, তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামি রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ”ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে বলেন, “সরকারের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। জনগণের শান্তি বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টা করলে জনগণই রুখে দাঁড়াবে। অন্য কোনো পথ না পেয়ে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে ধর্মীয় সহনশীলতা বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে। ” সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য ও বিরোধিতা মানে শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যলেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। এ ধরনের কোনো অপতৎপরতা সরকার সহ্য করবে না। এর বিরুদ্ধে যে কোনো তৎপরতা সরকার কঠোরভাবে দমন করবে। ”হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) জামেয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায় আলেমদের এক জরুরি সভায় প্রাণী বা মানবমূর্তি নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।গত ১৩ নভেম্বর চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম ভাস্কর্য নির্মাণের স্থল ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় এক সমাবেশে বলেন, “ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের চক্রান্ত তৌহিদি জনতা রুখে দেবে। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে মূর্তি স্থাপনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে। সরে না এলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ” একই দিনে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন, তার আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে, তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মূর্তি তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হলে তা হবে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে বেইমানি। ” এ ধরনের বক্তব্যের পরও সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ছিল না। বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন। গত ১৭ নভেম্বর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগৈর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চান। এ সময় কাদের বলেন, “বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এর পর দল বা সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলা হয়নি। শনিবারই (২৮ নভেম্বর) প্রথম দলের পক্ষে থেকে ওবায়দুল কাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে সরকার ও দল এতো দিন চুপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। যেহেতু ওই গোষ্ঠীটি এখনও অবস্থান থেকে সরে আসেনি, তাই সরকার ও আওয়ামী লীগও অবস্থান স্পষ্ট করবে। বিষয়টি নিয়ে ওই গোষ্ঠী অগ্রসর হওয়ার চেষ্ট করলে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “মূর্তি আর ভাস্কর্য এক জিনিস নয়, এটা তাদের বুঝতে হবে। টাকায়ও তো ছবি ব্যবহার করা হয়, আমরা করছি। তারা অনেক কথাই বলছে আমরা শুনছি, দেখছি। ”মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “তারা যেটা বলছে, এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ সব কথা বলছে। এটাকে ইস্যু করে তারা একটা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। গণবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করার ক্ষমতা সরকারের আছে। ” নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে কোনো আপস নেই, আওয়ামী লীগ কখনও আপস করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যর বিচার আমরা করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে। ”