নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া প্রবাসী এক বাংলাদেশি দম্পতি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্থানীয় আদালতে স্বীকার করেছেন। পেনসিলভানিয়ার ফেডারেল আদালতে গত বুধবার আইএসে যোগ দেয়া দুই ভাইকে ২০১৫ সাল থেকে অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশি অভিবাসী শহীদুল গাফফার (৪০) ও তার স্ত্রী নাবিলা খান (৩৫)। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আলোচনার ঝড় বইছে। পেনসিলভানিয়ার কলেজভিল শহরের বাসিন্দা শহীদুল গাফফার ও নাবিলা খানের স্বীকারোক্তির বিষয়টি গত ১৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মার্কিন অ্যাটর্নি উইলিয়াম এম. ম্যাকসুইন ও জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জন সি ডমারস। যা ওই দিনই পেনসিলভানিয়া অ্যাটর্নি অফিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। পেনসিলভানিয়া জেলা আদালত প্রকাশিত তথ্যে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই বাংলাদেশি দম্পতি আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়ার বিষয়ে নাবিলার দুই ভাইয়ের সঙ্গে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নাবিলা খান বাংলাদেশে বসবাসরত তার বোনের কাছে কিছু স্বর্ণ বিক্রি করতে পারবেন কি-না জিজ্ঞেস করেন। যে অর্থ দেয়া হবে ‘জে কে’ নামে তাদের বড় ভাইকে, যেন তিনি সিরিয়া যেতে পারেন। এর পরের মাসেই ‘জে কে’ নামের ওই ব্যক্তিকে বিদায় দিতে নাবিলা বাংলাদেশে আসারও ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এ সময় নাবিলার স্বামী গাফফার পেনসিলভানিয়ার কলেজভিল শহরে (১৬ হান্ট ক্লাব ড্রাইভ) ছিলেন। সেখান থেকে তিনি নাবিলার মাকে বার্তাও পাঠান। বার্তায় তিনি শাশুড়িকে বলেন, এক মহৎ উদ্দেশ্য আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আপনি গর্বিত মা হোন। এছাড়া ‘আই কে’ নামে নাবিলার ছোট ভাই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসে। ২০১৪ সালের জুন থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘আই কে’ বোন-দুলাভাইয়ের বাসাতেই থাকতেন। পরে সে বাংলাদেশে ফিরে যায়। এর মধ্যেই গাফফার ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার সুবিধা নিয়ে ‘আই কে’-এর কাছে বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতে শুরু করে যাতে সে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যেতে পারে। ২০১৫ সালের জুন নাগাদ ‘আই কে’ আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া যায়। বিবৃতিতে অ্যাটর্নি উইলিয়াম এম. ম্যাকসুইন বলেছেন, জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে নাবিলা খানের ভাইদের উৎসাহ ও সমর্থন দিয়েছে এই দম্পতি। তাদের এ কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। আইএসআইএসে যুক্ত হওয়ার পরও ২০১৫ সাল থেকে তারা ভাইদের অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ফক্স নিউজ জানায়, এ অভিযোগের বিচারে ৪০ বছর বয়সী গাফফার খান ও ৩৫ বছর বয়সী নাবিলা খানের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে। শুধু তাই নয়, মুক্তি পাওয়ার পর আরও তিন বছর থাকতে হতে পারে নজরদারিতে। ফিলাডেলফিয়ায় এফবিআইয়ের বিশেষ এজেন্ট ইনচার্জ মাইকেল জে. ড্রিসকোল বলেন, এ ঘটনাই বলে দেয়, প্রাণহানি এবং বড় ক্ষতি করার জন্য উগ্রপন্থিদের শুধু অস্ত্র হাতে নিতে হয় না, এভাবেও তারা ক্ষতিকর কাজ করতে পারে। শহীদুল গাফফার ও নাবিলা খান দম্পতির বাংলাদেশের গ্রামের বাড়ি কোথায় সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফিলাডেলফিয়া এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাদের সম্পর্কে মুখ খুলছেন না। এর আগে আকায়েদ উল্লাহ, নাসিফসহ বেশ কিছু বাংলাদেশি জঙ্গিবাদের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।