নিজস্ব প্রতিবেদক : মিল মালিক ও কৃষকরা সরকারের কাছে ধান-চাল বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কারণ ধান-চাল সংগ্রহে সরকারের নির্ধারিত মূল্য বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কম। যে কারণে চলতি আমন মৌসুমে সরকারকে চাল দেওয়ার চুক্তি করতেও মিল মালিকরা রাজি হচ্ছে না। যদিও সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজার এবং মিল মালিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কৃষকরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কারণ বাজার মূল্যের চেয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় কৃষকরা বাজারেই ধান বিক্রি করছে। সরকার গত ৭ নভেম্বর থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার কথা থাকলেও কোথাও এখনো ওই কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাছাড়া বর্তমানে বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৪ টাকা থেকে ৪৫ টাকা কেজি। এমন অবস্থায় কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা লোকসান দিয়ে মিল মালিকরা সরকারকে চাল দিতে রাজি নয়। ফলে অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে আমন মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ। আর এ অবস্থায় সরকারের খাদ্য সংগ্রহ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে।
সূত্র জানায়, গত বোরো মৌসুমে ২০ লাখ টন ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার শেষ পর্যন্ত অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি। চলতি আমন মৌসুমে সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে ৮ লাখ টন ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৭ নভেম্বর থেকে সরকারের কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার কথা ছিল। কিন্তু এখনো কোথাও ধান কেনা শুরু হয়নি। এর কারণ হচ্ছে ধান কেনার জন্য সরকারের যে বরাদ্দ, তা এখনো অনেক জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছেনি। আর আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু করার কথা। কিন্তু মিলাররা এখনো সরকারের কাছে চাল বিক্রি করার কোনো চুক্তি করেনি। ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। চলতি আমন মৌসুমে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২৬ টাকা কেজি দরে ১ মণ ধানের দাম হয় ১০৪০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে ১১০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় কোনো কৃষকই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, কেজিতে ৭-৮ টাকা লোকসান দিয়ে চাল দেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের উপর যে চাপ দিচ্ছে। গত বোরো মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না করায় ২৬১ মিল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দুই মৌসুমের জন্য তাদের অনেকের ব্যবসায়িক লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এমন কঠোর পদক্ষেপের পরও চলতি আমন মৌসুমে সরকারের সাথে চুক্তি করতেই রাজি হচ্ছে না মিল মালিকরা। ১৫ নভেম্বর থেকে ধান ও চাল কেনা শুরু করার প্রস্তুতি থাকলেও এখন পর্যন্ত মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি।
এদিকে মিল মালিকদের মতে, বোরো মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি চালের দর ঠিক করে ৩৬ টাকা। ওই সময় ধানের দর দেয়া হয় ১ হাজার ৪০ টাকা। ওই দরে ধান কিনে চাল তৈরি করতে খরচ হয় কেজি প্রতি ৩৯ টাকা। তাহলে মিল মালিকরা কীভাবে ৩৬ টাকায় সরকারকে চাল সরবরাহ করবে। তারপরও মিল মালিকরা লোকসানে চাল সরবরাহ করেছেন। এবার সরকার দর ১ টাকা বাড়িয়ে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। বাজারে ধানের দামও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় কেজিতে প্রায় ৭ থেকে ৮ টাকা লোকসান দিয়ে মিল মালিকরা সরকারকে কিভাবে চাল দেবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান সাকি জানান, বর্তমানে বাজারের মোটা চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৪ টাকা কেজি। সেখানে সরকারকে ৩৭ টাকা কেজি ধরে কিভাবে চালকল মালিকরা চাল দেবে। বোরো মৌসুমেও সরকারকে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়ে চালকল মালিকরা চাল দিয়েছে। কিন্তু এবার কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা লোকসান দিয়ে চাল দেয়া সম্ভব নয়। সেজন্যই মিল মালিকরা এখনো সরকারের সাথে কোনো চুক্তি করেনি। বর্তমানে সারা দেশে ১৭ হাজার রাইস মিল আছে। তাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ আছে, তা অন্য যে কোনো বড় খাতের চেয়ে কম নয়। করোনা মহামারির এ সময়ে অনেক রাইস মিল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ এমন অবস্থায় যেখানে তাদের প্রণোদনার প্রয়োজন, সেখানে খাদ্য মন্ত্রণালয় লোকসান দিয়ে চাল দেয়ার চাপ দিচ্ছে।