ঢাকা: বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক সরকারের কাছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা চেয়েছে। এবিষয়ে রূপালী ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিদেশে ব্যবসার দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য তারা সরকারের কাছে মূলধন ঘাটতি পূরণের আবেদন করেছেন। জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) শওকত জাহান খান বলেন, ঋণপত্র (এলসি) খোলার জন্য বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের অনেক বেশি ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা জনগণকে ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের খাদ্য সামগ্রী, সার ও প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে সহায়তা করছি। যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকে জনগণের টাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের বিরোধিতা করে আসছেন। তবে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে রূপালী ব্যাংক গত ছয়মাসে বেশ কয়েকবার মূলধন ঘাটতি পূরণের আবেদন করেছে। এদিকে ঋণ জালিয়াতির কারণে মূলধন সংকটে পড়ায় সরকার ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে পরবর্তী তিন অর্থ বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ১০ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা দিয়েছে। ঋণ জালিয়াতিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেসিক ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছে। যার পরিমাণ ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক পেয়েছে ৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক পেয়েছে ৮১৪ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংক পেয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বছরের জুন শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকায়। সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৪ হাজার ১৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকায়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৫ নভেম্বর রূপালী ব্যাংক থেকে পাওয়া চিঠির বিষয়ে তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাননি।মূলধন যোগান চেয়ে অর্থ বিভাগের কাছে লেখা চিঠিতে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুসারে মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তার অংশ হিসাবে নগদ সহায়তা, সরকারি গ্যারান্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ড প্রদানের প্রস্তাব করেছেন। ১৯৭২ সালে ৫ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে ১ কোটি টাকা পরিশোধিত মুলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে রূপালী ব্রাংক। ২০১৯ সালের শেষে অনুমোদিত মুলধন ৭০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মুলধন ৪১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকায় দাড়িয়েছে।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ইস্যু করা সাবঅর্ডিনেন্ট বন্ড ঋণের ৬০০ কোটি টাকার বিপরীতে বছরে ১২০ কোটি টাকা পরিশোধ করছে রূপালী ব্যাংক। আগামী দিনে মুলধন ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিঠিতে। ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর শেষে রূপালী ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জনগণের শেয়ারের পরিমাণ ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।