বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেওয়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং মাত্র ৩৪ শতাংশ এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করে।বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, নিউমোনিয়াজনিত শিশুমৃত্যুর ৪৫ শতাংশ ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসাজনিত অপ্রতুলতার একটি চিত্রও এ থেকে বোঝা যায়।২০১৭ সালের অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবার সক্ষমতা আছে।
ওই সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেট নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য সোর্সও অনুপস্থিত। মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জেলা হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার আছে।আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ড. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, দেশে ২০১১ সালে ইউনিয়ন নিউমোনিয়ায় ও পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ১১ দশমিক ১ শিশু মারা যেতো। এখন সেটি প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ১। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা তিনে নামিয়ে আনতে হবে।তিনি বলেন, এই দেশে অভিভাবকদের মধ্যেও সন্তানকে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার প্রবণতা দুর্বল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার কারণ জানা যায়নি। এই তথ্য ছাড়া ভবিষ্যতে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। শিশু নিউমোনিয়া হ্রাসে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য সবার সম্মিলিতভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।ডা. সমীর বলেন, শুধু মৃত্যুহার নয়, কত সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সেই প্রকৃত সংখ্যা জানা গুরুত্বপূর্ণ।ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার, স্বল্পমূল্যের দেশীয় অক্সিজেন স্বল্পতা দূর করতে হবে। প্রয়োজনে প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরি বাবল সিপ্যাপ নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম।তিনি বলেন, অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর প্রবণতা ১৫ গুণ বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস, এবারের প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া চিকিৎসা অক্সিজেন নিশ্চিতের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করুন। ’ এই দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা দেশব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুভযাত্রাসহ নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করবে।