রাজশাহী: বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হেনা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য জাতীয় নেতাদের সঙ্গে এএইচএম কামরুজ্জামানকেও হত্যা করা হয়। এরপর কেটে গেছে ৪৫টি বছর। বাবাকে হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তার বড় ছেলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকালে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহীদ বাবা এএইচএম কামরুজ্জামান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন লিটন।এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, কী অপরাধ ছিল বাবার, যার জন্য তাকে হত্যা করা হলো? মাত্র ৫২ বছরের জীবনে যিনি অর্ধেকটাই কাটিয়েছেন আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতাযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অন্যান্য জাতীয় নেতাসহ দেশকে স্বাধীন করার জন্য যিনি জীবনোৎসর্গ করেছেন। নিজের স্ত্রী-সন্তানের দিকে তাকানোর ফুরসত যিনি পাননি, সেই মানুষটাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হলো? তা আমরা জানি না। তবে হত্যাকারীরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতাসহ শহীদদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। মেয়র বলেন, আমার বাবা শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান জাতীয় ইতিহাসের অংশ। মাত্র ৫২ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে বাঙালির অধিকার আদায়ে তিনি নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের চূড়ান্ত সংকটকালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে কয়েকজন নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি তাদেরই একজন। আমি শহীদ কামরুজ্জামানের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। জেলখানায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার সময় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তার ছোট ভাই এএইচএম এহসানুজ্জামান স্বপন কলকাতায় লেখাপড়া করতেন। পত্রিকার খবরে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন জানিয়ে লিটন বলেন, আমরা দুই ভাই কাঁদতে শুরু করলাম। কলকাতায় তখন আমাদের আর কোনো অভিভাবক ছিল না। আমরা বাড়ি ফিরতে চাইলাম, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বাড়ি ফিরতে দেয়নি। দাফন করার জন্য বাবার দেহ ঢাকা থেকে রাজশাহী নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা শেষবারের মতো তার মুখটিও দেখতে পারিনি। বাবার স্মৃতিচারণ করে লিটন বলেন, বাবা বেশ ধর্মভীরু ছিলেন। ছোটবেলায় আমরা তাকে নিয়মিত নামাজ আদায় ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে দেখেছি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের জন্য বাবা অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যতক্ষণ বাসায় থাকতেন সর্বক্ষণ নেতাকর্মীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। ফলে আমরা তেমন সঙ্গই পেতাম না। আমরা বাবাকে মিস করতাম। তিনি আরও বলেন, বাবা অত্যন্ত নরম স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তাই বলে আমরা তাকে ভয় পেতাম না, এমন নয়। মায়ের উদারতা ও সহায়তা না থাকলে বাবার পক্ষে রাজনীতিতে সফলতা অর্জন সম্ভব ছিল না।