ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময় ৫৫২ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ১৩৩টি গার্মেন্ট কারখানা। এই রুগ্ন কারখানাগুলোর কাছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদ-আসল ও মামলার খরচসহ মোট দায় তৈরি হয়েছে ৬৮৬ কোটি টাকার। এখন ব্যাংকগুলোর এই দায় পরিশোধে সরকারের কাছে ‘বেলআউট’ সুবিধা চাইছে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এক মতামতে জানিয়ে দিয়েছে, সরকার এই সমস্যার সমাধান করতে গেলে কারখানাগুলোর ব্যাংক ঋণের দায় সুদে-আসলে সরকারকেই মেটাতে হবে। এ অবস্থায় বিষয়টির সমাধানে আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে।
সূত্রগুলো জানায়, ১৩৩টি গার্মেন্ট কারখানার মধ্যে অনেক আগেই কিছু বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু রুগ্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এ অবস্থায় উল্লিখিত কারখানাগুলোর ব্যাংক ঋণের দায় বিশেষ বিবেচনায় অবসায়নের জন্য সরকারের কাছে গত বছরের নভেম্বরে আবেদন জানায় বিজিএমইএ। ওই আবেদনের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দেয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেহেতু গ্রাহকের আমানত দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেহেতু এ ধরনের ঋণ অবসায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার নাই। তবে সরকার চাইলে রুগ্ন শিল্পগুলোর ঋণ অবসায়নে দায় নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে রুগ্ন শিল্প কারখানাগুলোর ঋণের তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন ১৩৩টির মধ্যে ২টি বাদে ১৩১টি তৈরি পোশাক কারখানার ঋণের তথ্য সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। তাতে দেখা যায়, এই কারখানাগুলোর মূলঋণ ছিল ৫৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, আয় খাতে নিট সুদ বাবদ দায় ১৪৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং মামলা খরচ ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকাসহ ব্যাংকগুলোর মোট দায় দাঁড়িয়েছে ৬৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মতামতে জানিয়ে দেয় : তৈরি পোশাক শিল্পের ওই রুগ্ন কারখানাগুলোর সার্বিক ঋণ অবসায়ন করতে হলে এই ৬৮৬ কোটি টাকার দায় সরকারকে মেটাতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আবেদন করার পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে মোট ২৭৯টি রুগ্ন গার্মেন্ট শিল্পের ঋণ ও সুদ পরিশোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আলোচ্য ১৩৩টি কারখানার ঋণ জটিলতা এখনো কাটেনি। বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে গতবছর থেকে সরকারের কাছে ধরনা দিচ্ছি। এই কারখানাগুলো করুণ অবস্থায় রয়েছে। তারা সবসময় মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। তাদের বেলআউট সুবিধা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নয়তো ছোট ছোট কারখানাগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে। ‘বেলআউট’ সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যদিও বলেছে, সরকার চাইলে ব্যাংক ঋণ সুদাসলে পরিশোধ করে বেলআউট সুবিধা দিতে পারে। তবে ২০১৪ সালের ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, রুগ্ন শিল্পের বিষয়ে অর্থায়নকারী ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আইনানুগভাবে এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এখন এই ১৩৩ রুগ্ন শিল্পের বিষয়ে সরকারের করণীয় চূড়ান্ত করার আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই সিদ্ধান্তটিও আলোচনায় আসছে।