কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুরে বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
নদীর পানি বৃদ্ধিতে একদিকে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের শতাধিক পরিবার, অপরদিকে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শীতকালিন সবজি ক্ষেতের। নদী পাড়ের গ্রামগুলোর বাড়ী-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলো। এছাড়া নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে ফসলি জমিও।
সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে পূনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্য দুটি আত্রাই ও ইছামতি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়।
ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউপির রাজারামপুর ঘাট পাড়া গ্রামে দেখা যায়, সেখানে শাখা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে, রাজারামপুর ঘাটপাড়া ও ভাটাপাড়ার অধিকাংশ বাড়ী-ঘর রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাটাপাড়া ও ঘাটপাড়ার অর্ধশত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ফুলবাড়ী শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ও কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ে।
খয়েরবাড়ী ইউপির কিসমত লালপুর গ্রামের মাসুদ রানা জানায়, তাদের চার বিঘা জমির মধ্যে দুই বিঘার অধিক নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে। একই ভাবে কিসমত লালপুর গ্রামের তরনীকান্ত, ভূপেন্দ্রনাথ এর জমিও নদীতে ভেঙ্গে পড়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মন্ডল বলেন, গত ১০ বছরে প্রায় ৫০ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। তার নিজের জমিও গেছে ১২ বিঘা।
এই ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, এ পর্যন্ত ফুলবাড়ীর ৪ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে দু-একদিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুর আলম সুমন বলেন, পানিবন্দী হওয়া পরিবারের জন্য ত্রান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি পানি উন্নায়ন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন জানান, সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের প্রধান তিনটি নদীর পানির মধ্যে পূনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা নদীর ৩৩ দশমিক ৫০ মিটার বিপদসীমার বিপরীতে বর্তমানে পানির স্তর রয়েছে ৩৩ দশমিক ৬০ মিটার, আত্রাই নদীর ৩৯ দশমিক ৬৫ মিটারের বিপরীতে বর্তমানে ৩৯ দশমিক ৩৬মিটার এবং ইছামতি নদীর পানি ২৯ দশমিক ৯৫ মিটারের বিপরীতে ২৯ দশমিক ৩৫ মিটার ওপরে অবস্থান করছে।
নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে পানি বাড়বে না এবং বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই বলে জানান কর্মকর্তা।