রাজশাহীতে অবরুদ্ধ দুইশত বছরের শিব মন্দির

রাজশাহীতে অবরুদ্ধ দুইশত বছরের শিব মন্দির
আবুল কালাম আজাদ( রাজশাহী): ‘আমরা নিরুপায়ের মতো সারেন্ডার করে দিয়েছি। আমাদের মন্দিরে প্রবেশের কোনো রাস্তা তারা রাখেনি। স্থানীয়ভাবে আলোচনা হয়েছে। দোকানী সাতদিন সময় চেয়েছেন সমাধানের জন্য। আমরা অপেক্ষা করছি।’কথাগুলে বলছিলেন রাজশাহীতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ১৯৪ বছরের মন্দিরটির সহ-সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার।
কোন ভাবে চোখে পড়ছে সাইনবোর্ডে, তাতে লেখা ছোট শিব মন্দির। স্থাপিত ১৮৩১। সে অনুযায়ী মন্দিরের বয়স ১৯৪ বছর। সাইনবোর্ডে লেখা আছে মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা রাধিকানাথেশ্বর। মন্দিরে  যাতায়াতের পথ পথ বন্ধ করে দোকানের প্রাচীর তুলেছেন এক ব্যক্তি। এর ফলে প্রাচীন এই মন্দিরটিতে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। মন্দিরটি রাজশাহী নগরের হড়গ্রাম নিউমার্কেটের পাশেই।
৩ ডিসেম্বর (বুধবার) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের পেছন দিকে ব্যবসয়ীদের জন্য নতুন একটি মার্কেট তৈরি করা হচ্ছে। সেদিক দিয়ে মন্দিরে যাতায়াতের পথ তখন থেকেই বন্ধ। উত্তর ও দক্ষিণ দিকেও দোকান। সেদিক দিয়েও যাতায়াত করা যায় না। শুধু সামনের দিক দিয়ে মন্দিরে প্রবেশের পথ ছিল। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে নতুন প্রাচীর তোলার কারণে। চারপাশে দোকান মধ্য দেবিসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মন্দিরটি।
স্থানীয় লোকজন জানান, মন্দিরটি প্রাচীন। তবে অনেক দিন ধরেই এখানে পূজা হয় না। শুধু সাইনবোর্ডটা আছে। আর ভেতরে আছে একটি শিবলিঙ্গ। মন্দিরের সামনের দিকের ছোট্ট জায়গাটিতে আগে এক ব্যক্তি ডাব বিক্রি করতেন। সেখান দিয়েই লোকজন মন্দিরে যেতেন। পরে ওই স্থানে একটি কাঠের ঢোপ (দোকান)দোকান হয়। এ দোকানে লুঙ্গি-গেঞ্জি বিক্রি করা হতো।সম্প্রতি পুরনো ওই দোকান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে ইট দিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। হারেজ আলী ও হায়দার আলী নামের দুই ভাই দোকানটি নির্মাণ করছেন।
ছোট শিব মন্দির থেকে একটু দূরেই শিবমন্দির, দুর্গামন্দির ও মদনগোপাল মন্দির আছে। সেখানে গিয়ে দেখা হয় মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ অভয় দাস, সহ-সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ এবং সদস্য খুদিরাম শর্মা ও প্রদীপ কুমার দাসের সঙ্গে। তাদের হাতে কিছু কাগজ দেখা যায়। মন্দিরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিতে কাগজে অভিযোগ লিখেছেন তারা। তবে সেগুলো এখনও দপ্তরগুলোতে জমা দেওয়া হয়নি।
তারা দাবি করেন, তাদের বড় মন্দির ও ছোট মন্দির একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ছোট শিবমন্দিরে প্রবেশের জন্য আগে রাস্তা ছিল। কাঠের ঢোপ দোকানের পাশ দিয়েই তারা মন্দিরে প্রবেশ করতেন। গত শুক্রবার দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। সে সুযোগে সেদিন মিস্ত্রি এনে প্রাচীর তুলে দেওয়া হয়েছে।
মন্দির কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমরা নিরুপায়ের মতো সারেন্ডার করে দিয়েছি। আমাদের মন্দিরে প্রবেশের কোনো রাস্তা তারা রাখেনি। স্থানীয়ভাবে আলোচনা হয়েছে। দোকানী সাতদিন সময় চেয়েছেন সমাধানের জন্য। আমরা অপেক্ষা করছি।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নির্মাণাধীন ওই দোকানের কাছে হারেজ আলী কিংবা তার ভাই হায়দার আলীকে পাওয়া যায়নি। বাজারেই গুড় বিক্রি করেন হারেজের জামাতা আতিকুল ইসলাম। মোবাইল নম্বর চাইলে আতিকুল ইসলাম দিতে পারেননি। আতিকুল দাবি করেন, জায়গাটি তার শ্বশুর-চাচাশ্বশুরেরা ওয়ারিশসূত্রে পেয়েছেন। নিজেদের জমিতে দোকান করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘পেছনে মন্দিরের জায়গা ছিল। তারা সব বেচে দিয়েছে। এখন সামনে দিয়ে হাঁটতে চায়।’
..

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::