আনাছুল হক,কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজার জেলার ‘ঈদগাঁও’ দেশের ৮৯৫তম উপজেলা হলেও এখানকার সরকারি সেবাদানকারী দপ্তরগুলোর বেশিরভাগ এখনো চালু হয়নি। ২০২৩ সালের ৫ জুন উপজেলা কার্যক্রম শুরু হলেও প্রশাসনের ১৫টি দপ্তরের কার্যক্রম এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। কিছু দপ্তরের কার্যক্রম অন্য উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্বে পরিচালিত হচ্ছে, যা স্থানীয়দের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলায় ভূমি অফিস, হিসাবরক্ষণ অফিস, শিক্ষা অফিস, প্রকৌশল অফিস, আনসার ও ভিডিপি অফিস, খাদ্য অফিস, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস (হাসপাতালসহ), কৃষি অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস, মৎস্য অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, মহিলাবিষয়ক অফিস, পল্লী উন্নয়ন অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস মোট গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সরকারি দপ্তর এখনো চালু হয়নি। ফলে নাগরিক সেবা পেতে স্থানীয়দের কক্সবাজার সদরসহ আশপাশের উপজেলা অফিসগুলোতে ছুটতে হচ্ছে। এতে সময়, অর্থ ও শ্রম—সবকিছুই অপচয় হচ্ছে।
ঈদগাঁওয়ের সন্তান কক্সবাজার জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট জুলকারনাইন জিল্লু দৈনিক কক্সবাজার প্রতিদিন কে বলেন, “উপজেলা হওয়ার পরও ১৫টি দপ্তর এখনো চালু না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। ঈদগাঁওর দেড় লক্ষ মানুষ না পারছে সদরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে, না পারছে নিজ উপজেলায় সেবা নিতে। এতে সাধারণ মানুষ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব দপ্তর চালু করে ঈদগাঁওবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি রহিম চৌধুরী বলেন “নতুন উপজেলা হওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ হবে। কিন্তু এখনো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অফিস চালু হয়নি, ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজের জন্য কক্সবাজার যেতে হয়। বিশেষ করে সরকারি বৃত্তি, উপবৃত্তি বা শিক্ষা সংক্রান্ত কাগজপত্রের জন্য আমাদের বারবার জেলা শহরে যেতে হয়, যা সময় ও অর্থের অপচয়। দ্রুত শিক্ষা অফিসসহ অন্যান্য সেবাদানকারী দপ্তর চালু করা প্রয়োজন।”
ঈদগাঁও উপজেলা ছাত্রদল নেতা আব্দুর রহমান দৈনিক কক্সবাজার প্রতিদিনকে বলেন “নতুন উপজেলা হলেও এখানকার জনগণ এখনো কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। আমরা চাই, অবিলম্বে সব সরকারি দপ্তর চালু করে জনগণের দুর্ভোগ কমানো হোক।”
ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ উল্লাহ বলেন, “একটা উপজেলা হয়ে যদি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা না থাকে, তাহলে নতুন উপজেলা করে লাভ কী? আমাদের ছোটখাটো চিকিৎসার জন্যও কক্সবাজার যেতে হয়।”
শহিদুল ইসলাম , একজন ব্যবসায়ী, বলেন, ভূমি অফিস না থাকায় জমি-জমার কাজের জন্য কক্সবাজার যেতে হয়। এতে সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় হচ্ছে। ঈদগাঁও উপজেলা হওয়ার পরও আমরা সেই পুরনো ভোগান্তির মধ্যেই আছি।
মোছা.তয়্যবা , একজন গৃহকর্মী, বলেন, মহিলাবিষয়ক দপ্তর না থাকায় আমাদের বিভিন্ন ভাতা ও অন্য প্রয়োজনে কক্সবাজার যেতে হয়, যা খুব কষ্টসাধ্য। সরকারের উচিত দ্রুত এসব দপ্তর চালু করা।
এ বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দপ্তরগুলো চালু করা যাচ্ছে না। তবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। জনসাধারণের দাবি, অস্থায়ীভাবে হলেও ভাড়া করা ভবনে দপ্তরগুলো চালু করে সেবা দেওয়া হোক, যাতে জনগণের ভোগান্তি কমে।