টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা নিন্ম অঞ্চল প্লাবিত

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা নিন্ম অঞ্চল প্লাবিত

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা : টানা বৃষ্টি, নদী-খালের অপরিকল্পিত খনন ও দখলের কারণে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা।

 

শহরের অধিকাংশ এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটা খাওয়ার পানির উৎস টিউবওয়েলসহ টয়লেট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ভেঙে পড়েছে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

 

দূষিত পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টিতে ডুবে রয়েছে আমন ধানের বীজতলাসহ কৃষি জমি।

 

 

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরের রাস্তাঘাট ও নিম্মঞ্চল। শহরের রসুলপুর, মেহেদীবাগ, মধু মল্লার ডাঙ্গী, পলাশপোল, পুলিশ লাইন, কামাল নগর,  ইটাগাছা, রাজারবাগান, মাছখোলা, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দীপুর কলোনি, আলিয়া মাদ্রাসা, রথখোলা বিল, কুখরালী, গড়েরকান্ডা, বাঁকাল, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, বারুইপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তা গুলো এখন পানির নিচে। অতিবৃষ্টিতে ফলে আমন ধানে রোপনে সংশয় দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু এলকায় ধানের বীজ তলা নষ্ট হয়েছে। এতে দুচিন্তার রয়েছে কৃষকরা।

 

 

বৃষ্টির কারনে কোথাও কোথাও আবার ড্রেনের পঁচা পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে। ঢুকে পড়েছে বসত বাড়িতেও। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে খাওয়ার পানির উৎস গুলোও। এ সব কারনে সৃষ্টি হয়েছে জনদূভোগ।

 

 

 

এ দিকে বছরের ৬ মাস পানিতে প্লাবিত থাকে শহরে বেশিরভাগ এলাকা। সাতক্ষীরা পৌরসভা কাগজ কলমে প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হলেও নাগরিক সেবার মান বরাবরই অভিযোগ ওঠে পৌর কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অপরিকল্পিত মৎস ঘের ও পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেই দায়ী করছে স্থানীয়রা।

 

 

বারুইপাড়া এলাকার দীনু রঞ্জন বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তাটি প্রায় ১ মাস যাবৎ ১০০ পরিবারের ৫০০ শতাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি আসে যে বিলে, সেই বিলের পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিগত পাঁচ বছর ধরে চলছে এই অবস্থা।

 

 

 

এ দিকে শহরের রসুলপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশলাইন সড়কটি পানিতে ডুবে গেছে ড্রেনের নোংরা পানি রাস্তায় উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে এ এলাকার অলি-গলির রাস্তাগুলো। বাস টার্মিনাল এলাকার অনেক রাস্তা এখন পানির নিচে।

 

 

এ ছাড়া পলাশপোল এলাকার বেশ কয়েকটি নিন্ম এলাকায় জমেছে পানি। ফলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।

 

 

শহরের বদ্দীপুর কলোনির বাসিন্দা আলমগীর কবির বলেন, বছরের চার থেকে পাঁচ মাস এলাকায় হাঁটু পানি জমে থাকে। দীর্ঘ দিন পানি আটকে থাকায় চলাচলের রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। পঁচা পানির কারণে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে এলাকাটি। গোসল, পায়খানা, খাওয়ার পানি সংগ্রহে খুব কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় শিশুরাও ঠিকমত স্কুলে যেতে পারছে না পঁচাপানি ও সাপের ভয়ে।

 

 

পুরাতন সাতক্ষীরা ডাঙিপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পূর্বপাশে রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে উঠানে। সেখানে অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘরে ও উঠানে পানি থৈ থৈ করছে। নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

 

শহরের কামালনগর ও ইটাগাছা এলাকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। তবে জলবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করছে অপরিকল্পিত ঘের মালিকদের। একই সাথে কেউ কেউ দুষছেন পৌরসভার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেও।

 

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী ও খালগুলোতে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল পানি নিষ্কাশনের পথ সচল রাখা। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা গেছে ভিন্ন । খাল ও নদীর তলদেশ না কেটে পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে, খালের প্রশস্ততা কমানো হয়েছে। যার ফলে বর্ষার পানি নদীতে না গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোকালয়ে জমে থাকছে। এমনকি নদীর পানিও মাঝে মাঝে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

 

কামালনগর এলাকার জহুরুল বলেন, সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু দুর্ভোগ কাটে না । ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল থাকলে আমাদের এই ভোগান্তি পৌঁছাতে হতো না।  নামে মাত্র প্রথম শ্রেনির পৌরসভা বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

 

 

 

শহরে  বিভিন্ন জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ তিনি জানান, শহরের জলবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করেছি তারা দূরত্ব সময়ের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নিচ্ছ আশা করছি দ্রুত সময়ে মধ্যে সদরের জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে এবং আগামীতে জলবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::