স্টাফ রিপোর্টার: আমার বাপ আর ভাই পুরো সংসার চালাতো। নয়জনের পরিবারে মাত্র দুইজনই পুরুষ ছিল। আল্লাহ দুই জনকেই কেড়ে নিলো। এখন আমাদের দেখার মতো আর কেউ রইল না। কিভাবে আমরা বাঁচবো। কে আমাদের সংসার চালাবে। আল্লাহ কেন এমন শাস্তি দিলো।’ এভাবেই বিলাপ করছিল মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী গ্রামের গাড়িচাপায় একই পরিবারের চারজন মারা যাওয়া আব্দুস সামাদ
ফকিরের মেয়ে উম্মে খাদিজা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সন্তান প্রসব করাতে নেয়ার পথে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। কিন্তু গাড়িচাপায় প্রাণ হারায় ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি আর ননদ। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা।
নিহতরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের উত্তর দুধখালী গ্রামের আব্দুস সামাদ ফকির (৬৮), তার স্ত্রী সাহেদ বেগম (৬০), তার ছেলে মাওলানা বিল্লাল ফকির (৪০) ও মেয়ে আফসানা আক্তার (১৮)।
জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী গ্রামের বিল্লাল ফকিরের স্ত্রী রোজিনা বেগম অন্তঃসত্ত্বা। চলতি মাসের ২৩ তারিখ তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ। তবে বুধবার রাত থেকে তার ব্যাথা হচ্ছিল। এজন্য সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পরিবারের ১০ জন মিলে ঢাকার পথে আসছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা- মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নীমতলী এলাকায় আসলে চাকা পাংচার হয়ে যায়। তখন রাস্তার পাশে চাপিয়ে চাকা মেরামত করছিলেন চালক।
এ সময় ওই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর স্বামী বিল্লাল ফকির, শ্বশুর আব্দুস সামাদ ফকির, শাশুড়ি সাহেদা বেগম ও ননদ আফসানা রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ছিল। ঠিক তখনই গোল্ডেন পরিবহনের একটি বাস তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুইজন ও ঢাকা নেয়ার পরে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। একই পরিবারের চারজনের এমন করুণ মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা। আর পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবারটি।
দুধখালীর সাবেক ইউপি মেম্বার সরাফাত হোসেন জানান, হাফেজ সামাদ ফকির আমাদের এলাকায় কাজীবাড়ী জামে মসজিদে ও তার ছেলে মাওলানা বিল্লাল ফকির আশাপাট জামে মসজিদে ইমামতি করতেন। তাদের তেমন সহায় সম্বল নেই। এদের দুইজনের ওপরে পুরো সংসার চলতো। তাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ পরিবারে আর উপার্জন করার কেই নেই।
এদিকে, যে পরিবহন তাদের মৃত্যুর জন্যে দায়ী, সে পরিবহনের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি এলাকাবাসীর।