“চবিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে মারার হুমকি ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের”

“চবিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে মারার হুমকি ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের”

চবি প্রতিনিধি: জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়কে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুম বাংলা’ এর প্রতিনিধি সোয়াদ সাদমান কে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মারার হুমকি দিয়েছে ঐ ছাত্রদল নেতা যার রয়েছে একটি অডিও রেকর্ড। রেকর্ডে শোনা যায় অভিযুক্ত ঐ ছাত্রদল নেতা প্রকাশ্যে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে গালাগালি করে মারার হুমকি দেওয়ার সাথে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান কে অপরাধী আখ্যা দিয়ে তুই বলে সম্বোধন করে তার সম্পর্কে বলেন যে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ কোরবান আলী ও সহকারী প্রক্টর জনাব মোঃ নুরুল হামিদ কানন এর মাধ্যমে ফোন করিয়ে অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান নাকি তার কাছে লজ্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নতুবা সে তাকেও মারত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও টহলের ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবং প্রধান উপদেষ্টার আগমনে তার নিরাপত্তার জন্য গত ২৭ তারিখ সমাবর্তন স্থলে গণজমায়েত নিষেধ বলে নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান টহল কার্য চালানোর সময় সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়কে সমাবর্তন স্থলে বাইকসহ বেশ কয়েকজন কে নিয়ে বসে থাকতে দেখেন। সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা উত্তরে বলেন যে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরবর্তীতে সহকারী প্রক্টর তাদের পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। এতে করে সহকারী প্রক্টর তাদের উক্ত স্থান ত্যাগ করতে বলেন এবং বাইকটি আটক করতে চাইলে ঘটনাস্থলে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন এবং সরকারী প্রক্টর অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমানের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়ান এবং তাকে লাঞ্চিত করেন।

এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুম বাংলার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সোয়াদ সাদমান ‘চবির ৫ম সমাবর্তন ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা, সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন। একে কেন্দ্র করে চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে সাংবাদিক সোয়াদ সাদমান কে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন ও মারার হুমকি দেন।

উক্ত ঘটনার পর ভুক্তভোগী সাংবাদিক তার নিরাপত্তা ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আমি সোয়াদ সাদমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একজন ছাত্র। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুম বাংলা’ এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছি। ২৮/ ০৪/২৫ তারিখ জুম বাংলায় ‘চবির ৫ম সমাবর্তন ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা, সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরদ্ধে’ শিরোনামে আমার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনকে ঘিরে চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ও মারধরের হুমকি দেয় যা আমার কাছে প্রমাণ হিসেবে অডিও রেকর্ড আছে। আমি শঙ্কিত, আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ঐ সাংবাদিক জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠনের ন্যায় ছাত্রদলের ইতিবাচক ও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সংবাদ প্রচার করেছি ঠিক তেমনি ক্যাম্পাসে ঘটা অন্যান্য ভালো-মন্দ ঘটনারও সংবাদ আমি প্রচার করেছি। ঘটনা জানার পর তার সংবাদ প্রচার করা আমার দায়িত্ব। ঐ দিনও আমি তাই করেছি, ঘটনা জেনে সংবাদ প্রচারের জন্য সহকারী প্রক্টর মোঃ বজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করেছি একই সাথে চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় কেও আমি যোগাযোগ করার জন্য একাধিকবার ফোন করেও তার সাড়া পাইনি। তিনি আরও জানান, সংবাদ প্রচারের জন্য আমাকে ফ্যাসিস্ট আমলের মতো প্রকাশ্যে গালাগালি করে মারার হুমকি দেওয়া হবে এটা আমি ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর কল্পনাও করতে পারিনি। আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং দায়িত্বশীলদের নিকট আমার নিরাপত্তা ও উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইছি।

এ বিষয়ে চবির সহকারী প্রক্টর মোঃ বজলুর রহমান গণমাধ্যমনে জানান, ক্যাম্পাসে বহিরাগত কোনো বাইক পাওয়া গেলে আমরা আটক করি। বাহিরের বাইকগুলো আমরা স্বাভাবিকভাবে বের করে দিই। বাইকটা সাজ্জাদের না। বাইকের নম্বর আমার কাছে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কে? তখন বললো আমি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। আমি বললাম তুমি সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছো তো কি হয়েছে? তুমি এভাবে কথা বলছো কেন আমার সঙ্গে! তখন বলে কীভাবে কথা বলবো? তিনি বলেন, আমি তাকে বললাম বাইক যেহেতু তোমার না বাইকটা আমরা আটক রাখি। তুমি কাল প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা বলে বাইকটা নিয়ে যেও। এটা বলার পর সে আমার সঙ্গে আরও উচ্চবাচ্চ শুরু করে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে কাজ চলছে, এটা নিয়ে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কোন অনৈতিক কর্মকান্ড চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সমর্থন করে না। আমরা এটা হাই কমান্ডে অবগত করব। এবং অথরিটির সাথে কথা বলে বিষয়টা দেখব।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় গণমাধ্যমনে জানান, তাকে আমি মারধরের হুমকি দিয়েছি এটা মিথ্যা। আমি তাকে চিনি পর্যন্ত না।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::