ঈদগাঁও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

ঈদগাঁও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

আনাছুল হক,কক্সবাজার প্রতিনিধি:ঈদগাঁও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, দিদারুল ইসলাম ভুয়া বিল তৈরি করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করেছেন এবং পণ্য ক্রয়ের প্রকৃত মূল্য থেকে অধিক দামে বিল দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, তিনি অভিযোগ প্রত্যাহারের মিথ্যা প্রমাণপত্র তৈরি করতে সাজ্জাদুল করিমের স্বাক্ষর জাল করেছেন।

২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি, সাজ্জাদুল করিম নামক এক সদস্য গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতি থেকে অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে দাবি করা হয় যে, সমবায় কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম অত্যন্ত উচ্চমূল্যে কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সামগ্রীর বিল তৈরি করেছেন। তদন্তের পর, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে জমা দেওয়া প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে যে, অতিরিক্ত ব্যয়ে ভুয়া বিল তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সাজ্জাদুল করিম অভিযোগ করেছেন যে, দিদারুল ইসলামের তৈরি বিলের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। বিশেষ করে, HP ল্যাপটপ এবং প্রিন্টারের বিলের পার্থক্য ছিল বিপুল পরিমাণে, যা প্রমাণ করে যে, এই বিলগুলো ছিল মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক। এছাড়া, এসব পণ্যের প্রকৃত দাম যাচাইয়ের পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দিদারুল ইসলাম জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন আরও একটি গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে। সাজ্জাদুল করিম দাবি করেন যে, দিদারুল ইসলাম তার স্বাক্ষর এবং মোবাইল নম্বর জাল করে অভিযোগ প্রত্যাহারের মিথ্যা প্রমাণপত্র তৈরি করেছেন। সাজ্জাদুল করিম স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি অভিযোগ প্রত্যাহার করিনি, এবং করতেও চাইনি। আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, এগুলো সত্যি নয়।” তবে তদন্ত প্রতিবেদনেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, তবে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

কক্সবাজার জেলা সমবায় অফিসার মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন যে, অভিযোগটি এখনও তদন্তাধীন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে এর পরিণতি জানা যাবে।

এই ঘটনা জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে সরকারের নীতিমালা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রতি জনগণের আস্থা কমছে। অনেকেই মনে করছেন, যদি নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকাণ্ডের লাগাম টানা সম্ভব হবে।

ঈদগাঁওয়ে সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুধু প্রশাসনিক দুর্নীতির চিত্রই নয়, এটি সরকারি পদের প্রতি জনতার আস্থাহীনতার ইঙ্গিতও দেয়। এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে, তা সমাজে আরও বেশি দুর্নীতি ও অবিশ্বাসের জন্ম দিতে পারে।

ঈদগাঁওয়ের সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুধু তার বিরুদ্ধে নয়, পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেছে। স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার ও সরকারি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::