“চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে—চবিতে শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি”

“চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে—চবিতে শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি”

নাঈম হোসেন দূর্জয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: চারুকলা ইনস্টিটিউটকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত না করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হিসেবে চারুকলা বিভাগ বরাবরই দেশের শিল্পচর্চার এক অগ্রণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রেখে এসেছে। ১৯৭০ সালে বাংলা বিভাগের অংশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে, পরবর্তীতে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে বিভাগটি।

এই ঐতিহ্যবাহী বিভাগটি ২০১০ সালে মূলে ক্যাম্পাস থেকে শহরে স্থানান্তরিত করা হয়। এই স্থানান্তর কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার হরন এবং সরকারি চারুকলা কলেজ তথা চট্টগ্রাম শিল্পকলার পথিকৃৎ শিল্পী রশিদ চৌধুরীর স্বপ্নের মৃত্যু বলে আখ্যা দিয়েছেন।

এই স্থানান্তরের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বদলে বিগত সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়নে সক্রিয় ছিল এবং এখনও আছে। শিক্ষার্থীরা জানান, উক্ত শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক সুফিয়া বেগম পরে ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থীদের সাথে করা অসংখ্য অন্যায়ের দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করলেও আজও চারুকলার সংশ্লিষ্ট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।

চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে রেখে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের প্রতি চলে আসছে চরম অবহেলা ও বৈষম্য। পৃথক এই ইনস্টিটিউটের চারশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ২৫টি আসনের একটি ছাত্র হোস্টেল রয়েছে, আর নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসনই নেই। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য শিক্ষার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

২০২২-২৩ সালে শিক্ষার্থীরা যখন চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে, তখন ছাত্রলীগের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়। এতে নারী শিক্ষার্থীসহ বহুজন আহত হন, সাংবাদিরাও হেনস্তার শিকার হন এবং চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে যেতে হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এই হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা আ.জ.ম নাসির, চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুফিয়া বেগমসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনের একটি অংশ বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

ইতিপূর্বে চারুকলার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ফলাফল কারচুপি, পরীক্ষার রেজাল্ট আটকে রাখা, সেশনাল নম্বর নিয়ে হুমকি ও অনুত্তীর্ণ করে দেওয়া, ক্লাসে ঢুকতে না দেওয়া ইত্যাদি হেনস্তার অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

২০২৪ এর অভ্যুত্থান পরবর্তী ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ এ বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারুকলা শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দেয়, ১লা এপ্রিল ২০২৫ থেকে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে এবং সেখানেই ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু ১লা এপ্রিল পেরিয়ে গেলেও মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়নি চারুকলা ইনস্টিটিউট।

এরই ধারাবাহিকতায় আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চারুকলা ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনের ঘোষিত নির্দিষ্ট সময়ে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত না করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন পালন করছে।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অবিচল, একদফা দাবি নিয়ে। চারুকলাকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা আজ অনশনে বসেছি, হয় মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর, নয় অনশনে মৃত্যু। আমাদের দাবি, সহজ স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবহেলার বিরুদ্ধে এবং ভবিষ্যতের প্রতি এক নির্মম নিরবতার বিরুদ্ধে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::