আশিকুর রহমান :কাজী মোঃ আব্দুল খালেক মিয়া। তিনি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার এমপিওভূক্ত খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সেই সঙ্গে শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার হেড কাজী। আবার অন্য উপজেলা রায়পুরার মরজাল ইউনিয়নেরও ভারপ্রাপ্ত কাজীর দায়িত্বও পালন করছেন এই ব্যক্তি। আর এসব কিছুই করছেন ম্যানেজ করে।তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এমপিওভূক্ত স্কুলের একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলন করেন তিনি। সেই সঙ্গে বিয়ে ও তালাক কার্য সম্পাদন করে সেখান থেকেও পান কমিশন।
নিয়ম বলছে নিকাহ রেজিষ্ট্রারের লাইসেন্স পেতে হলে থাকতে হবে এলাকায়। যেখানে তিনি বিয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আর একব্যক্তি দুই পদে থাকা যাবে না। সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুটি ভিন্ন ভিন্ন উপজেলায় তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এক উপজেলায় তিনি শিক্ষক ও কাজী আর অন্য উপজেলাও হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কাজী। একদিকে যেমন আইনের লঙ্ঘন তেমনি অন্যদিকে দুই জয়গার সেবা প্রত্যাশীরাও পাচ্ছেন না সেবা। আর এসব কিছুই হয়েছে আপন ভগ্নিপতি নরসিংদী জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেনের বরাতে।
এদিকে নিকাহ ও তালাক নিবন্ধনে সেবা গ্রহীতারা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ পদে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা কাজী মোঃ তাজুল ইসলাম মোল্লা অবসরে যাওয়ায় পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। গত বছর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিচার শাখা নিয়ম অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট পতিত আওয়ামী হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের ফলে ওই নিয়োগটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মরজাল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজ চলমান রাখতে জেলা ও রায়পুরা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন ও কাজী ওবায়দুল্লাহ’র যোগসাজশে জেলা রেজিস্ট্রারকে প্রবাহিত করে প্বাশবর্তী শিবপুর উপজেলার যোশর ইউনিয়নের কাজী মোঃ আব্দুল খালেক কে মরজাল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজীর পদটি বাগিয়ে নেন। এর পর থেকেই তিনি মরজাল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার নামে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন। এসব এনেহ কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগও দাখিল করেন।
এবিষয়ে জানতে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আরমান মোল্লা প্রতিনিধিকে বলেন, মরজাল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী আব্দুল খালেক মিয়ার বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে আমি প্রকাশ্যে এবং গোপনে তদন্ত করি। এসব তদন্তে জানতে পারি, দিনের দুপুর বেলায় সাধারণত অধিকাংশ বিয়ে সম্পন্ন হয়। এই সময় আব্দুল খালেক কাজী স্কুল ফাঁকি দিয়ে বিয়ে পড়ান রেজিস্ট্রি অফিসে। এছাড়াও তিনি জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন এর ভগ্নিপতি। সেই সুবাদে তিনি সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এ পদের দায়িত্ব পান। এছাড়াও তিনি সরকারি এমপিওভূক্ত স্কুল খৈনকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং যোশর ইউনিয়নের মূল কাজী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এমপিওভূক্ত একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় বিবাহ অনুষ্ঠানে তার পক্ষে সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রার কাজ সম্পূর্ণ করা দূরুহ। তাই তিনি এসব অনুষ্ঠানে তার সহকারী হিসেবে অন্যজনকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন। সেসুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাল্যবিবাহ, সরকার নির্ধারিত ফি থেকে অধিক ফি আদায়, মিথ্যা বা ভূয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার মাধ্যমে মোটা অংকের ফি আদায় করা তার নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কি-না আইন বহির্ভূত কাজ। এসব এনেহ ও অন্যায় কাজের ফলে সরকারের যেমন সুনাম নষ্ট হচ্ছে তেমনি ইউনিয়নে সামাজিক বিরোধ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি বেতন ভোগ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকাকে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিতে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর আমি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।
সরেজমিনে যোশর তার চেম্বারে গিয়ে কাজী আব্দুল খালেক মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বিয়ে পড়ানোর প্রলোভন দেখালে তিনি দুপুরের স্কুল ফাঁকি দিয়ে তার চেম্বারে ছুটে আসেন। গত এক মাসের বিবাহ নিবন্ধনের তালিকা চাইলে তা দিতে অসম্মতি পোষণ করে দ্রুত চেম্বার ত্যাগ করেন তিনি। পরে অন্য মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে প্রশ্ন না করে জেলা কাজী সমিতির সভাপতি ও জেলা রেজিস্ট্রার কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। আর আমি এখানে এমনি আসিনি। সবকিছু ম্যানেজ করেই মরজালের কাজীর দায়িত্ব নিয়েছি। উপরের সবকিছু হাতে থাকলে ওইসব অভিযোগ, টবিযোগে কিছু যায় আসে না। আর অন্য কাউকে দিয়ে বিবাহ নিবন্ধন করানো হয় না।
কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আলতাফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ওনি আমার আত্মীয়। একব্যক্তি একাধিক পদে কাজ করতে পারবেন। এ ধরণের আইন আমার কাছে আছে। এই ব্যাপারে জানতে নরসিংদী জেলা রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের অফিসে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি তা কেটে দেন। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।