মেহেরপুরে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ

মেহেরপুরে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধি:মেহেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ঠিকাদাররা এ অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ওয়ার্ক অর্ডার, বিল অনুমোদনসহ বিভিন্ন দাফতরিক কার্যক্রমে তাকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয় এবং অসদাচরণের শিকার হতে হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের।
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে জানান, প্রতিটি কাজের ওয়ার্ক অর্ডার নেওয়ার জন্য ০.৫০% এবং প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) নাম ভাঙিয়ে আরও ০.২৫% ঘুষ দিতে হয়। যদি এই টাকা না দেওয়া হয়, তাহলে ওয়ার্ক অর্ডার আটকে রাখা হয় এবং বিল সংক্রান্ত কাগজপত্র অনুমোদন করা হয় না। এমনকি ঠিকাদারদের সঙ্গে রূঢ় ভাষায় কথা বলা হয় ও হয়রানি করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, “আমি ৭০ লাখ টাকার কাজ পেয়েছি কিন্তু ওয়ার্ক অর্ডার পেতে আমাকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের খরচ বাবদ আরও ৪৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে কিন্তু তারপরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় আমি দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী অফিসে ডেকে আমাকে গালাগালি করেন এবং আমার বিল আটকে রাখেন।”
অপর এক ঠিকাদার জানান, “আমরা চাই সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করতে কিন্তু এই ধরনের ঘুষ ও হয়রানির কারণে প্রকল্পগুলোতে আমাদের লাভ তো দূরের কথা ঠিকমতো কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘুষের পরিমাণ এত বেশি যে ভালো মানের কাজ করেও আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের কাছে আমরা কার্যত: বন্দি হয়ে আছি।”
ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা জানান, “আমরা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হতে চাই এবং মানসম্পন্ন কাজ করতে চাই কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর ঘুষ-দুর্নীতি ও অনৈতিক চাপের কারণে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের আয় কমে গেছে, মানসম্মত কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে, আর প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। “তারা আরও বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের মতো আমাদের জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। অতীতের সরকারগুলো যখন দুর্নীতি করতো, তখন অন্তত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েও কাজ করা যেত। এখন আমাদের থেকে বেশি ঘুষ চাওয়া হচ্ছে অথচ সেই ঘুষের টাকা জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ঠিকাদাররা অবিলম্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমরা এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই।”এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলজিইডির কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক জাহিদ ইসলাম বলেন, “আমি কোনো প্রকল্প থেকে একটি টাকাও নেই না। যদি আমার নাম ব্যবহার করে কেউ টাকা নেয়, তাহলে তাকে ধরে ফেলুন। তবে আমার নাম ব্যবহার করে কারও টাকা নেওয়ার দায় আমি নেব না এবং এমন কোনো ব্যবস্থাও নেব না।”
এদিকে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক পিইঞ্জ বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাজের ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো কর্মকর্তা ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে থাকে, প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::