বাঙলা কলেজ সংবাদদাতা:রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি বাঙলা কলেজে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাঙলা কলেজ বিজনেস এন্ড ক্যারিয়ার ক্লাবের সহযোগিতায় সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে জুলাই বিপ্লবকে অর্থবহ করতে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে ৩৬ জুলাইকে সকলের মাঝে তুলে ধরতে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে প্রদর্শনের জন্য তারুন্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে কলেজ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্বাদ এবং ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে ফুটে উঠে। কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাংলা সংস্কৃতির এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
তারুণ্য উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান, উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মিটুল চৌধুরী,শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নাহিদা পারভীন। কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকরাও এই উৎসবে অংশ নেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “পিঠা উৎসব আমাদের শেকড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের লক্ষ্য তরুণ প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করা। তারুণ্যের পিঠা উৎসব এই প্রচেষ্টারই একটি উদাহরণ। এরকম আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে।”
এই উৎসবে ২০টি স্টলে দেশের ঐতিহ্যবাহী ৫০ প্রকারের বেশি পিঠার প্রদর্শনী ও বিক্রির আয়োজন করা হয়। নকশি পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠাসহ নানা স্বাদের পিঠার ঘ্রাণে মুখরিত ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। উক্ত ২০টি স্টলে পিঠা প্রদর্শনী ও বিক্রির প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে কলজের সকল বিভাগসহ, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের একটি স্টল, বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (বাকসাস), বিএনসিসি, সেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন, রেডক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, লিও ক্লাব, বাঙলা কলেজ ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি সোসাইটি এবং রোভার স্কাউটস। এসব স্টলে বিভিন্ন ধরনের পিঠা প্রদর্শিত হয়, যার মধ্যে ভাপা, চিতই, দুধপিঠা, পাটিসাপটা এবং নারকেল পুলির মতো ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এসব স্টল সাজিয়ে পরিবেশন করেন পিঠার স্বাদ। শুধু পিঠার প্রদর্শনী নয়, উৎসবকে আরও রঙিন করে তোলে এক জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা।
পিঠা উৎসবে অনার্স পড়ুয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী আল তাজরীমিন জানান, “এই উৎসব আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। পাশাপাশি, আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে এবং তা উদযাপন করতে পেরে আমরা গর্বিত। সেই সাথে এ ধরনের উৎসব তারুণ্যের মধ্যে ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা তৈরি করে। এটি আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার একটি সুন্দর উপায়।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোঃআওলাদ হোসেন জানান, তারুণ্য উৎসব সৃষ্টিশীলতা, উদ্যম এবং স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। এটি তরুণদের নতুন চিন্তা-ভাবনার আদান-প্রদান ও শিক্ষার্থীদের প্রতিভা প্রকাশের একটি উজ্জ্বল মঞ্চ। এ মেলা নতুন প্রজন্মকে উদ্ভাবনী পথ তৈরি করতে অনুপ্রাণিত করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান বলেন,বাংলার ইতিহাস ও বাঙালী জাতির ইতিহাস তরুণদের গৌরবের ইতিহাস ১৯৫২ সালে তরুণদের রক্তের বিনিময়ে আমরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা পেয়েছি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে এই তরুণরাই পরাজিত করেছিল, সর্বশেষ ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এই তরুণদের অবদানই ছিল মুখ্য। আমরা এই তরুণদের নিয়েই একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “তরুণদের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পিঠা সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ করতেই এই উৎসব। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজনের ধারা অব্যাহত থাকবে।”
উপস্থিত অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ ধরনের উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন তারা।
উল্লেখ্য, পিঠা উৎসবে তারুণ্যের উদ্দীপনায় মুখরিত ছিল সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং উদ্যোগ এই আয়োজনকে আরও বর্ণাঢ্য করে তোলে। তারুণ্যের প্রাণশক্তি ও সৃজনশীলতার মেলবন্ধন এ উৎসবকে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করেছে।