৩ দফা দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবনে তালা, অবরুদ্ধ দুই উপ-উপাচার্য

৩ দফা দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবনে তালা, অবরুদ্ধ দুই উপ-উপাচার্য

 

মো. রাফাসান আলম, রাবি প্রতিনিধি:৩ দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচার্য সহ দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসময় দাবি মেনে না নেওয়ার পর্যন্ত ভবনে তালা ঝুলানো থাকবে এবং কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় পোষ্য কোটা বাতিল, জুলাই বিপ্লবে বিরোধীতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি ও আওয়ামীলীগের দোসর দুই শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ এনে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে গণক্ষমা চাইতে হবে এই তিন দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও, আন্দোলনে অংশ নেওয়া অধিকাংশই রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। ফলে বহিরাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কামরুজ্জামান কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বিভা, বারিন্দ মেডিকেল কলেজের মাহফুজা রাহাত, বেলপুকুর কলেজ সুস্মিতা, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্মী,  আদর্শ অনার্স ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. শুভ্র ও রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাসনিমসহ প্রায় ৩০জন বহিরাগত শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশ নেন।
এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, এই প্রশাসনকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাবেদারী করার জন্য নিয়োগ করা হয়নি। নিয়োগ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি যদি আপনার কাছে অন্যায় আবদার মনে হয় তাহলে আপনি বড় ফ্যাসিস্ট। শুধু আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট নয় অযৌক্তিক বিষয় যারা যৌক্তিক করার জন্য ভেতরে লড়াই করছেন আপনারাই বড় ফ্যাসিস্ট। আপনারা আমাদের যড়যন্ত্রকারী বলছেন আমরা বলছি ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রশাসনিক ভবনের সকলেই আপনারা ফ্যাসিস্টের দালাল।
এখন আপনারা হয় পোষ্য কোটা বাতিল, আওয়ালীমীগের দোসরদের খুঁজে বের করে মামলা করবেন, ফ্যাসিস্টের দোসরদের নিয়োগ দেওয়ায় রেজিস্ট্রার, ভিসি এখানে সকলের সামনে গণক্ষমা চাইবেন নতুবা শীতকালীন ছুটি যাবে, গরমকালীন ছুটি যাবে তবুও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলবে।
অবরুদ্ধ অবস্থায় রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “তাপসী রাবেয়া হলের একজন নারী কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজে প্রশাসনিক ভবনে এসে আটকে গেছেন। খবর এসেছে তার বৃদ্ধা মা সংকটাপন্ন অবস্থায়। তাকে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। একজন ডায়াবেটিক রোগীর খাবার ঢুকতে দেয়নি। আমি সালাহউদ্দিন আম্মারকে উক্ত কর্মকর্তাকে বের হতে দেবার অনুরোধ করলে সে বের হতে দিবেনা বলে ফোন রেখে দিয়েছে। আমি এই ধরনের অমানবিক আচরণ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যের নাগরিক অধিকার খর্ব করে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।”
এবিষয়ে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমরা সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সাধারণ কর্মচারীদের জন্য ১% কোটা রেখেছি। আসলে আপনারা যদি খোঁজ নেন দেখতে পাবেন তাদের জন্য এটা রাখা যৌক্তিক। তাদের অবস্থা ভালো হয়ে গেলে আগামীতে এটাও বাতিল করা হতে পারে। তবে এবছর ১% বহাল থাকবে।
আওয়ামীলীগের দোসর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া শাস্তি দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
এছাড়া আওয়ামীলীগের দুই শিক্ষককে সহকারী প্রক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যগত ক্রুটি ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না সে বিষয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বলেন জানান উপাচার্য।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::