আনাছুল হক, কক্সবাজার প্রতিনিধি:কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় ফসলি জমির উর্বর মাটি (টপসয়েল) কেটে নেওয়ার ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলে টপসয়েল লুটের কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতার ঝুঁকি চরমে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে শত শত একর জমি আবাদযোগ্যতা হারাবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় একটি শক্তিশালী দালালচক্র কৃষকদের আর্থিক দুরবস্থা ও অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে তাদের জমির টপসয়েল নামমাত্র দামে কিনে নিচ্ছে। এই মাটি পরে ইটভাটা মালিকদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ঈদগাঁও এলাকার ইটভাটার মালিকরা সরাসরি এ অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফসলি জমির এটেল মাটি ইট তৈরিতে বিশেষভাবে কার্যকর। এ মাটি দিয়ে তৈরি ইট মজবুত ও টেকসই হয়। এ কারণেই ইটভাটা মালিকরা উচ্চমূল্যে মাটি কিনতে উৎসাহী। অন্যদিকে, সাময়িক আর্থিক লাভের আশায় কৃষকরা জমির উর্বর মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে জমির দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে এবং জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাইজপাড়া ঝাইক্কা কাটা বিল, চান্দেরঘোনা বিল, পশ্চিম বোয়ালখালীর বিল, জালালাবাদের ধমকা বিলসহ বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে ডাম্পার ট্রাকের মাধ্যমে টপসয়েল লুট করে পাচার করা হচ্ছে। এ মাটি ইটভাটা ও নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের ম্যানেজ করেই এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ঈদগাহ্ প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক আশফাক উদ্দিন আরাফাত বলেন, “উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ না হলেই সিন্ডিকেট করে এই ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। টপসয়েল লুটের কারণে ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে এবং জমির উচ্চতা কমে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।”
টপসয়েল লুটের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর, গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ঈদগাঁও উপজেলা প্রশাসন একটি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে দুইটি ডাম্পার ট্রাক জব্দ করা হয়। তবে অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই চক্রটি পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রশাসনের একদিনের অভিযান সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় পরিবেশবাদী এবং সচেতন নাগরিকরা প্রশাসনের প্রতি নিয়মিত এবং কার্যকর অভিযানের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, “প্রশাসন যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে ঈদগাঁওয়ের আবাদি জমি স্থায়ীভাবে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়বে। পাশাপাশি, পরিবেশ সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োগ করতে হবে।”
পরিবেশ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, ফসলি জমির টপসয়েল কাটা ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে আইন প্রয়োগে প্রশাসনের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এখন প্রশ্ন হলো, প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কতটা দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যথায়, ঈদগাঁওয়ের কৃষি ও পরিবেশ এক ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে।