আনাছুল হক, কক্সবাজার:১৯৯৭ সালের এই একটি ছবি তুলে ধরে তখনকার কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার নিস্তরঙ্গ সৌন্দর্যের চিত্র। ছবিতে একটি শিশু দাঁড়িয়ে আছে শান্ত নির্জন পরিবেশে, যার পেছনে সাগরপাড়ের রাস্তা, খোলা প্রকৃতি এবং সামান্য কিছু অবকাঠামোর উপস্থিতি সেই সময়কার কলাতলীর সাধারণ জীবনযাত্রার পরিচয় বহন করে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার দুই পাশে গাছপালা এবং পেছনে দূরে সাগরের নীল আভা। পর্যটন শিল্প তখনও ব্যাপক বিকাশ লাভ করেনি, তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অনেকটাই অক্ষত। ছবির পটভূমিতে হাতে গোনা কয়েকটি ঘরবাড়ি এবং গাড়ি দেখা যাচ্ছে, যা প্রমাণ করে যে কলাতলী তখনও বাণিজ্যিক পর্যটনের আওতার বাইরে ছিল। পর্যটক সংখ্যা কম থাকায় এলাকাটি বেশ শান্ত ও নির্জন ছিল।
ছবির রাস্তা প্রশস্ত এবং একপাশে টিলা ধরা পড়েছে, যা এখন অনেকাংশে আধুনিকীকরণ ও অবকাঠামোর চাপে হারিয়ে গেছে। এই ছবিটি শুধু একটি স্থিরচিত্র নয়, বরং ৯০ দশকের কলাতলী এলাকার প্রকৃতি, সরলতা এবং মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্কের গল্প বলে। তখনকার দিনে কলাতলী ছিল কেবলমাত্র প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয়। সাগরের গর্জন আর কেওড়া গাছের ছায়ায় ঘেরা এলাকাটি ছিল এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের প্রতীক।
আজকের কলাতলীর কোলাহলপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করলে, ১৯৯৭ সালের এই ছবি আমাদের মনে করিয়ে দেয় কীভাবে কালের বিবর্তনে একটি স্থান তার প্রাকৃতিক রূপ বদলে ফেলতে পারে।
বর্তমান কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের গর্ব
কক্সবাজার, বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী, বর্তমানে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত (১২০ কিমি) ছাড়াও এই শহর এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, উন্নত অবকাঠামো এবং বৈচিত্র্যময় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কক্সবাজারে এখন পাঁচ তারকা হোটেল, রিসোর্ট, এবং অভিজাত রেস্তোরাঁর অভাব নেই। কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
মেরিন ড্রাইভ সড়ক: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র-সংলগ্ন সড়ক।
প্রাকৃতিক ও আধুনিক আকর্ষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, ইনানী বীচ, হিমছড়ি ও মহেশখালী দ্বীপ।
যোগাযোগের উন্নতি: কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা বিশ্বমানের ভ্রমণকে সহজ করেছে।
তবে, পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে কক্সবাজারের পরিবেশ কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। প্লাস্টিক দূষণ, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ, এবং বনাঞ্চলের ক্ষতি পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি এখন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
আজকের কক্সবাজার শুধু সমুদ্র দেখার স্থান নয়; এটি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং আধুনিক ভ্রমণ অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে একটি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র।