গর্তে জমানো ইঁদুরের ধান তুলে নবান্ন উৎসব

গর্তে জমানো ইঁদুরের ধান তুলে নবান্ন উৎসব
নিজস্ব প্রতিবেদক:ছেলেকে সাথে নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে ফিরে ইঁদুরের গর্ত খুঁজছেন বাবা। ইঁদুরের গর্ত খুঁজে পেলেই শুরু করছেন খোঁড়াখুঁড়ি। কী ভাবছেন? গর্ত খুঁড়ে বাবা ছেলে ইঁদুর ধরছে নিশ্চয়!কিন্তু না বিষয়টি অনেকটা ভিন্ন।
আমন মৌসুমে ধান পাকে। এই মৌসুমে পাকা ধান কেটে গর্তে নিয়ে রাখে ইঁদুর আর সেই গর্তের ভেতর ইঁদুরের রাখা ধানের শীষ খুঁজে বের করেন একরামুলসহ আরও অনেকে। এ ধানের চাল থেকেই হবে ভাত। আর তা খেয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিন পার হবে একরামুলের। এটাই হচ্ছে তাদের নবান্ন উৎসব।
রাজশাহীর  তানোর উপজেলার মুন্ডোমালা গ্রামের বাসিন্দা একরামুল হক। সকালে দুমুঠো ভাত খেয়েই জীবিকার খোঁজে বেড়িয়ে পড়ে বাবা-ছেলে। শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের ধান সংগ্রহ। সাথে থাকে খোন্তা, কোদাল, বাইশ ও বস্তা ।
ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহকারী একরামুল হক ভাটায় কাজ করেন। প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময় ভাটার কাজ শুরু হয়। আমন মৌসুমে কোন কাজ না থাকায় তিনি ক্ষেত-খামার থেকে ধানের শীষ সংগ্রহ করেন। তবে বছরের অন্য সময় রিক্সাও চালান তিনি।
তিনি জানান, সব গর্ত খুঁড়ে ধান পাওয়া যায় না। আবার কিছু গর্তে বেশ ভালো ধান পাওয়া যায়। তবে এ কাজে রয়েছে  জীবনের ঝুঁকি। কারণ ইঁদুরের গর্তে অনেক সময় সাপ বাসা বাধে। তারপরও পেটের দায়ে জীবন বাজি রেখে এই কাজ করেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজ করে প্রতিদিন ১৫-২০ কেজি ধান জোগাড় করেন তিনি। আবার কিছু সময় এর চেয়ে বেশিও হয়।’
কৃষি মাঠের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন মৌসুমে সাধারণত ইঁদুর বেশি করে পাকা ধানের শীষ কেটে গর্তে নিয়ে যায়। এ সময়টাতে মাঠে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। শুধু ইঁদুরের গর্ত থেকেই নয়, ধান কাটার পর খেতে ধানের যে সব শীষগুলো পড়ে থাকে, সেগুলোও এই নারী-পুরুষরা কুড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে তাদের বাধা দেন না এই কৃষকরা।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::