আশিকুর রহমান :-পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর উপাদান হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাই বাংলাদেশেও ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর প্রেক্ষিতে পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার, উৎপাদন এবং বিপনন ও পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আইনের ১৫ ধারায় বলা হয় যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করা হলে ছয় মাসের জেল ও জরিমানা করা হবে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের নজির নরসিংদীর বড়বাজারে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বতীকালিন সরকারের বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শপিংমল ও কাচাঁবাজার গুলোতে পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা? এদিকে সরকারের বিধিনিষেধ কে অমান্য করে নরসিংদী বড়বাজার ও মাধবদীতে অবাদে এবং প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ। ফলে দিন দিন এই নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগ ব্যবহার বেড়েই চলেছে। হাট-বাজার, শপিংমল থেকে শুরু করে শহর-গ্রামের অলিগলিতে ছোট ছোট মুদি দোকানসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন ব্যাগের ব্যবহার। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদী ও মাধবদী বাজারের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা যায়, কাঁচাবাজার, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। আর প্রশাসনের উদাসিনতার কারণেই অসাধু পলিথিন ব্যবসায়ীদের পলিথিন বিক্রি বন্ধ করা যায়নি। এ কারণেই খুচরা বিক্রেতারা পণ্য বিক্রিতে দেদারসে ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ পলিথিন। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে পলিথিনের ব্যবহার।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী ও মাধবদীর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে রাতারাতি বনে যান শতশত কোটি টাকার মালিক। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর সহ আশপাশ এলাকা থেকে পলিথিন ক্রয় করে কভার্ডভ্যান ও কুরিয়ার সার্ভিস যোগে নরসিংদী ও মাধবদীতে নিয়ে আসেন। তারপর এসব পলিথিন নরসিংদীর সূতাপট্টি, সিএন্ডবি রোড, পাট পট্টি, থানার ঘাট ও শহরতলীর নজরপুর গ্রামের বুদিয়ামারা নামক স্থানে নামানো হয়। আর মাধবদীর গুলো স্কুল মার্কেট, গরু বাজার ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও হোটেল পট্টিতে নামানো হয়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে এসব অবৈধ পলিথিন অতি গোপনে বাসা-বাড়িতে মজুদ রাখেন ব্যবসায়ীরা। পরে নৌকা ও বিভিন্ন যানবাহনে করে জেলার বাইরে ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, আশুগঞ্জ, বাঞ্ছারামপুর, গোপালদী সহ বিভিন্ন হাটবাজার ও দোকানে পাইকারি বিক্রি করেন। এতে করে প্রতিটি খুচরা বিক্রেতারা সহজেই বিভিন্ন সাইজের পলিথিন হাতের নাগালে পান। আর এতে করে বিক্রেতারা নিষিদ্ধ পলিথিন নির্ভর হয়ে ক্রেতা সাধারণের নিকট বেচা বিক্রি করেন। আর ক্রেতা সাধারণও পলিথিন ব্যবহারে উৎসাহিত হোন।
খুচরা কাঁচামাল ও দোকানীরা বলেন, আইন আছে, প্রয়োগ নাই। পলিথিন তৈরির ফ্যাক্টরী বন্ধ বা পলিথিন ব্যবসায়ীদেরকে আটক করা না গেলে পলিথিন ব্যবহার রোধ করা সম্ভব না। আমরা কি করবো, ক্রেতাও পণ্য পলিথিনে নিতে চায়, আমরাও দেই। বাজার থেকে পলিথিন বন্ধ করতে চাইলে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে এবং মাঠ পর্যায়ে অভিযান দিতে হবে। তাহলে পলিথিন ব্যবহারে সবাই সচেতন হবে।
ক্রেতা বলেন, সরকার পলিথিন ব্যবহারে আইন করলেও তা বাস্তবে প্রয়োগ নেই। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হলে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করতে হবে। সাধারণ মানুষকে পলিথিন ব্যবহারে কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তা না হলে আইনের সুফল পাওয়া যাবে না।