বেরোবি শিক্ষার্থীদের ৬৫ টাকায় চলে একদিনের মিল : পুষ্টিহীনতায় ভোগেন বেশিরভাগ

বেরোবি শিক্ষার্থীদের ৬৫ টাকায় চলে একদিনের মিল : পুষ্টিহীনতায় ভোগেন বেশিরভাগ

ইবতেশাম রহমান সায়নাভ:::রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের ছাত্রাবাসে  ৬৫ টাকায় মেলে একদিনের খাবার। সকালে ১০০ গ্রাম, দুপুরে ২০০ গ্রাম, ও রাতে ২০০ গ্রাম ভাত খেয়ে অতিবাহিত হয় জীবন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার দৈনিক ৫০-৫৬ গ্রাম আমিষ (প্রোটিন) ও ২৭৫ গ্রাম শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) প্রয়োজন। বেরোবির শিক্ষার্থীদের সাথে যা তুলনা করলে পাওয়া যায় আকাশপাতাল তফাৎ। আবাসিকে বসবাসরত একজন শিক্ষার্থী দিনে ২০-২৫ গ্রাম আমিষ ও ১৩০-১৪০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করেন। ফলে অপুষ্টিতে ভোগেন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী।

পুষ্টি চাহিদা বলতে আমাদের শরীরের সঠিক ক্রিয়াকলাপ, বৃদ্ধির জন্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষা করতে প্রতিদিন যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়, তাকে বোঝায়। এই চাহিদা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং সাধারণত বয়স, লিঙ্গ, শারীরিক কার্যক্রম, এবং স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। পুষ্টি চাহিদা পূরণে প্রধানত প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট (চর্বি), ভিটামিন, খনিজ পদার্থ উপাদানগুলোর প্রয়োজন হয়। WHO এবং FAO এর মতো সংস্থাগুলি বিভিন্ন বয়স ও অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পুষ্টির সুপারিশ প্রদান করে, যা খাদ্য পরিকল্পনা এবং পুষ্টি গ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণত দৈনিক ২,৫০০ ক্যালোরি,  মোট ক্যালোরির ৫০-৬০% কার্বোহাইড্রেট, মোট ক্যালোরির ১০-১৫% প্রোটিন, মোট ক্যালোরির ২০-৩০% চর্বি (ফ্যাট), ৭৫-৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১,০০০-১,৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। যার ধারের কাছেও গ্রহণ করে না বেরোবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে বিভিন্ন জটিল রোগের আশংকা রয়ে যায় তাদের শরীরে।

আবাসিকে বসবাস করার সুবাদে বাজার করার অভিজ্ঞতা হয়েছে বহুবার। মিল ম্যানেজার জনপ্রতি সকালে ১৫ টাকা, দুপুরে ২৫ টাকা, ও রাতে ২৫ টাকা ধরে ৩২ জনের ২০৮০ টাকার বাজার করতে দিলেন । বাজার করতে গিয়ে পড়লাম মহাবিপদে! একি, এতো বিরাট এক অংকের খেলা! দোকানদারকে বললাম সকালে ৩২ টি মিলে ১০০ গ্রাম করে ৩কেজি ২০০ গ্রাম ও দুপুর রাতে মিলিয়ে ১২ কেজি ৮০০ গ্রাম চাল দিন। টাকা গুনতে হলো কেজি প্রতি ৫৮ করে ৯২৮ টাকা। ১২০ টাকার তেল, মশলা ৮০ টাকার মশলা, ৩০ টাকার লবণ মিলে গেলো ২৩০ টাকা। ৩২ জনে ৩বেলা খাওয়ার জন্যে কেজি প্রতি ৫০ করে ৪ কেজি আলু ২০০ টাকা ও ২৫০ টাকার বিভিন্ন শাক-সবজি নেওয়ার পর দেখি হাতে অবশিষ্ট রয়েছে ৪৭০ টাকা। এখন চিন্তার বিষয় হলো অবশিষ্ট এই টাকার ভিতর কিভাবে দুবেলা আমিষ দেওয়া যায়? ৪১৬ টাকায় দুইবেলার জন্যে মাছ অথবা মাংশ ক্রয় করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন করণীয় কি? অনেক ভেবে চিন্তে ৩২টি ডিম কিনলাম, প্রতিবেলা হাফ করে ডিম খাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো বুদ্ধি পাচ্ছি না।

শুধু রংপুরে নয়, দেশের বিভিন্নস্থানেই একি চিত্র লক্ষ্য করা যায়। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রতিদিন একবেলা খেয়েই জীবন অতিবাহিত করছে শিক্ষার্থীরা। দারিদ্র্য সীমার নিচে জীবন অতিবাহিত করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের আর্তচিৎকার শুনার নেই কেউ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::