খাদিজা আক্তার, বান্দরবান : বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলায় খুমি সম্প্রদায়ের বসবাস । পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী খুমি সম্প্রদায়। ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা তিন হাজার ৯৯৪ জন। এ সম্প্রদায়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তংসই খুমি। গত ২৪ অক্টোবর সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন খুমি সম্প্রদায়ের মেয়ে তংসই খুমি । এ খবরে উচ্ছ্বসিত খুমি সম্প্রদায়ের লোকজন।
রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের দুর্গম মংঞো পাড়ায় তংসই খুমির বাড়ি। পরিবারে চার ভাই বোনের মধ্য তংসই তৃতীয়। তার বাবা নয়লো খুমি এই সম্প্রদায়ের প্রথম সরকারি চাকরীজীবি ছিলেন। কর্মজীবনে ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । তিনি ২০১৪ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর পর মা লিংসাই খুমির একান্ত প্রচেষ্টা, উপার্জন এবং ভাইদের অনুপ্রেরণায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরে পৌছেছেন তংসই। তার মা বান্দরবান শহরের উজানী পাড়ায় বাসায় কোমর তাঁতে খুমি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোষাক তৈরী করে বিক্রয় করেন। তংসই বান্দরবান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা হলিক্রস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন । বড় ভাই সুইতং খুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে মাস্টার্স, মেঝো ভাই তংলু খুমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত এবং ছোট বোন রেংসই খুমি ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।
খুমি সামাজিক সংগঠন; খুমি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সিঅং খুমি জানান খুমি সম্প্রদায় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জন ছেলে শিক্ষার্থী দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। খুমি জনগোষ্ঠীতে মেয়েদের শিক্ষার হার অনেক কম। ইতোপূর্বে কিছু মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ে এই প্রথম তংসই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তুংসইয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি খুমি সম্প্রদায়ের মেয়েদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তংসই আমাদের খুমি সম্প্রদায়ের গর্ব ।
নিজেদের গড়ে তোলার পাশাপাশি খুমি সম্প্রদায়ে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও সমাজে খুমি সম্প্রদায়কে আরো এগিয়ে নিতে চায় তংসই ও তার পরিবার