খাদিজা আক্তার, বান্দরবান :উৎসবমুখর দিন, সরকারি বন্ধের দিনেও জেলা প্রশাসনের ভ্রমণ হতে বিরত থাকার নির্দেশনার কারণে পর্যটক শূণ্য রয়েছে পাহাড় কন্যা পার্বত্য জেলা বান্দরবান । এতে গতিহীন হয়েআছে বান্দরবানের অর্থনীতি। শুনশান নিরব জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্র । পার্কিংয়ে পড়ে রয়েছে পর্যটকদের নিয়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ের গায়ে নিত্ত ছুটেচলা চাঁন্দের গাড়ি খ্যাত পর্যটক গাড়ি গুলো ।
অলস সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, গাড়ি চালক, গাইড এবং ফটোগ্রাফারগণ ।
সদ্য শেষ হওয়া শারদীয় দূর্গাপূজা এবং প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ও পর্যটন মৌসুমের শুরুতে অক্টোবর এবং নভেম্বর ০২ মাস পর্যটকদের ভ্রমেণে আগ্রহী করতে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিবহনে ২০% ছাড় ঘোষনা করেছিলো বান্দরবান মাইক্রোবাস, জীপ, ও পিকআপ মালিক সমিতি । সদ্য শেষ হওয়া উৎসব এবং সরকারি বন্ধগুলোতে প্রায় ৫০% অগ্রিম বুকিং হয়েছিলো জেলার হোটেল , মোটেল, রিসোর্ট। এর পরপরই গত ৬ অক্টোবর ২০২৪ তিন পার্বত্য জেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে (৮ অক্টোবর – ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে অগ্রিম বুকিং বাতিল করেন আগ্রহী পর্যটকগণ। এতে জেলায় প্রতিদিন গড়ে কোটি টাকা লোকসানের আশংকা প্রকাশ করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পাহাড় কন্যা বান্দরবানে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়, স্থানীয় কাচামাল এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলমূলের ব্যবসায় । প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত জেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পর্যটকদের রাত্রিযাপনের সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল, মোটেল , রিসোর্ট। পঞ্চাশের বেশি রেস্টুরেন্ট, ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক টুরিস্ট গাড়ি, ভ্রমন সহজ ও নিরাপদ করার জন্য নিয়োজিত প্রায় ১ হাজার গাইড । বর্তমানের পর্যটক শূন্য থাকায় উৎসব ও সরকারি বন্ধের দিনগুলোতেও সকলে অলস সময় পারকরছেন।
২০২০ সালে কোভিড -১৯ এর প্যান্ডেমিক সময় হতেই মূলত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পর্যটন শিল্প। প্যান্ডেমিক সময় পার করে ২০২২ সালের পর্যটন মৌসুমে সবেমাত্র মাথা তুলে দাড়াতে শুরু করছিলো পর্যটন ব্যবসায়ীগন। চিরচেনা পাহাড় মুখর হচ্ছিলো পর্যটকদের পদচারনায় । ২০২২ এর শেষাংশে জেলার পর্যটনে আবারো বাধা হয়ে দাড়ায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) । নিরাপত্তা জনিত কারণে বিভিন্ন মেয়াদে রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে নিষেধাজ্ঞা জারী করে জেলা প্রশাসন। জেলা সদর ও আশে পাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো উন্মুক্ত থাকলেও আতংকের কারণে আশানুরুপভাবে আসেনি পর্যটক। ২০২৩ সালের শেষাংশ হতে পর্যটন ব্যবসা কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও প্রায়শই বন্ধ ছিলো পর্যটকদের আকর্ষনের রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচির পর্যটন কন্দ্রসমূহ। একেরপর এক নিষেধাজ্ঞা, আতংকের কারণে পাহাড় কন্যা বান্দরবান হতে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সারাদেশের পর্যটক। পূর্বে বেশ সংখ্যক বিদেশী পর্যটকের দেখা মিললেও এখন তা শূণ্যের কোটায়। এতে বিপাকে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীরা। থেমে আছে পাহাড়ের অর্থনীতির চাকা । বেকার হয়ে পড়ছেন অনেক মানুষ । এসকল কারণে হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় সকল ব্যবসায়ীরা ।গত 20 অক্টোবর সকালে বান্দরবান জেলা মডেল মসজিদ নির্মানের জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পর ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে।