অবহেলিত রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে বেদখলে বিশাল ভূসম্পদ

অবহেলিত রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে বেদখলে বিশাল ভূসম্পদ
আবুল কালাম আজাদ,রাজশাহী: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দফতর রাজশাহী  বিভাগীয় শহরে অবস্থিত। দফতরটির অবকাঠামো অনেকটাই ভঙ্গুর। টিনের ছাউনিতেও রয়েছে বেশকিছু প্রশাসনিক অফিস। ২৩ অক্টেবর বুধবার সদর দফতর সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়েও সে চিত্র উঠে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী রেলভবনের কাজ ৩১ বছর আগে ইএমসি পশ্চিমের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছিলো। ১৯৯০ সালে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার ১৭৮ টাকা ব্যয়ে কোর অংশে ৬ তলা ও পাশে চারতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো। যেখানে ১৬ ইঞ্জিডায়া ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ৫৩৪ টি পাইলিংয়ে ২৮ হাজার ২৮০ বর্গফুটের বিল্ডিং নির্মাণের কথা ছিলো। বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ২৩৫টি পাইলিংয়ের ওপর ১৭ হাজার ৭৬২ বর্গফুটের দুইতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ে এ প্রকল্প অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে যায়। এ কারণে অনেক অফিস এখন টিনের ছাউনির মধ্যেই কার্য সম্পাদন করে যাচ্ছে।
বর্তমান পশ্চিমাঞ্চল রেলের রাজশাহী প্রশাসনিক অফিসগুলো বিচ্ছিন্নভাবে আছে। একেকটি অফিস একেক জায়গায়। অনেক অফিস টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। এ অবস্থার উন্নয়নে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন রেলভবন নির্মাণ করে একই ছাদের তলে রাজশাহী রেলের সব প্রশাসনিক অফিসগুলোকে আনা সম্ভব হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। রাজশাহীতে আধুনিক বহুতল রেলভবন নির্মাণ হবে। এর মাধ্যমে রেলের কার্যক্রমে গতি ফিরবে।
অবিভক্ত বাংলায় ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ হয়ে রেলপথে কলকাতার সঙ্গে রাজশাহীর যোগাযোগ ইতিহাসের পাতায় এখনো উজ্জ্বল। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পর সেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর রেল যোগাযোগ আবারো স্থাপন হতে হচ্ছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত।
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলভবন নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ থাকলেও এবার আধুনিক রেলভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেল কতৃপক্ষ। একইসঙ্গে রেলের বিশাল পরিত্যক্ত জমি নিয়েও আসছে নতুন পরিকল্পনা। আর এসব কর্মযজ্ঞের সূচণা হলে নব যৌবন ফিরবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশে মোট রেলপথ ৩ হাজার ৫৫৩ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ১ হাজার ৮১১ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েও বিশাল জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। অনেক জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। কোনো কোনো এলাকায় ভূমিহীনরাও বসবাস করছেন। রাজশাহী নগরীতেই রেলওয়েও অনেক জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। সম্প্রতি এসব জমি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে রেলপথ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পরিত্যক্ত জমির তালিকাও তৈরি করেছে।
জানা গেছে, রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিগুলো থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আয়বর্ধক কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ জমিগুলো দখলে নিয়ে সেখানে মার্কেট নির্মাণসহ দখলে থাকা জমিগুলো থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনাও নেয়া হবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মামুনুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার বেশকিছু প্রকল্প বাস্তাবয়ন করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উন্নয়নে বেশ কিছু সু-খবর আসবে।
সে সাথে রাজশাহীতে আধুনিক বহুতল রেলভবন নির্মাণ হবে। এর মাধ্যমে রেলের কার্যক্রমে গতি ফিরবে।
দীর্ঘ ৭৭ বছর পর ২০২৩ সালো ২২ জুন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে মোট ১৩টি উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে ট্রেন সার্ভিস চালু অন্যতম। ট্রেন চালুর খবরে রাজশাহীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করছেন, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা ছাড়াও রাজশাহীর সঙ্গে ভারতে যোগাযোগের নতুন মেলবন্ধন তৈরি হবে। এতে করে রাজশাহী অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালু হলে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও রাজশাহীর যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়বে। তখন রাজশাহী ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে। এ জন্য দুই দেশের রেলপথও সংস্কার করা হয়েছে। নেপাল এরইমধ্যে রাজশাহী রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সারও আমদানি করেছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদহ, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে কলকাতার হাওড়ায় রেলস্টেশনে পৌঁছাবে। এ রুটে কলকাতা যেতে ৪২৫ কিলোমিটার পথ দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ১১ ঘণ্টা। গেদে সীমান্ত দিয়ে ২১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কলকাতা যেতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। তবে এখনো ট্রেনের রুট ঠিক হয়নি। এ নিয়ে দুই দেশের রেল কর্মকর্তারা দ্রুতই বসবেন বলে জানা গেছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলের যৌবন ফিরলে, এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণ্যিজ্য সার্বিকভাবে মানুষের জীবনমানের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ হলে যোগাযোগ সহজ হবে। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::