এদিকে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নগরের বটতলা এলাকায় ববির দুই শিক্ষার্থীকে একা পেয়ে মারধর করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তখন প্রাণ বাঁচাতে ওই দুইজন দৌড়ে পাশেই থাকা বটতলা পুলিশ ফাঁড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন।সহপাঠীদের মারধর করার খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে এলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে বাসের চালকসহ ১৫/২০ জন আহত হন। পরে সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌঁছলে বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরের বটতলা এলাকার আশপাশে এসে জড়ো হয়। অন্যদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাস ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। এসময় বিভিন্ন স্থানে উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে ববি শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পালটা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদেরসহ সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী যে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি বিরোধীয় জমি দখলের চেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে হেনস্তা করেছে। আর তার প্রতিবাদ জানাতে গেলে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়।তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিরোধ সমাধানের চেষ্টা চালাতে গিয়ে সমন্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফিসহ বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে রাতে ববি শিক্ষার্থীরা শুধু বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর নয়, প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক হল ও বেশ কিছু বাস ভাঙচুর করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, রাত ৩টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়ার খবর পাওয়া যায়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও বিএম কলেজের আশেপাশে হামলা-পালটা হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, নগরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে বাড়ি দখল করতে ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিল বিএম কলেজের সমন্বায়ক পরিচয় দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে। সেখানে গিয়ে রাফি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন বাড়ির মূল মালিকদের ওপর হামলা করে। সেখানে হামলার শিকার হয়েছেন আমাদের শিক্ষার্থী জোয়া। খবর পেয়ে আমরা ওই রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার কারণ জানতে চাইলে আমাদের ওপরও হামলার চেষ্টা করে রাফি। পরে এঘটনায় থানায় জিডি করেন জোয়া।
তারা আরও জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০টায় আমাদের দুই শিক্ষার্থীকে নগরের বটতলা এলাকায় একা পেয়ে বেধরক মারধর করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দুই ঘটনা মিলেই ঝামেলা হয়েছে। প্রথম দিকে আমাদের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি আমাদের বাসও ভাঙচুর করা হয়েছে। সশস্ত্র হামলায় আমাদের অনেকে আহত হয়েছে। আমরা বিএম কলেজে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছি সেনাবাহিনীর কাছে।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, বেশ কয়েক দিন যাবত এক মহিলা বিএম কলেজে এসে সমন্বায়কদের সহায়তা চাচ্ছিলেন তার বাড়ি দখল করা হয়েছে জানিয়ে। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে সমন্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ওই মহিলার বাড়িতে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য যান। তবে বাড়িতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দেওয়া জোয়া সমন্বায়কদের গালাগাল শুরু করেন। পরে জোয়া তার বয়ফ্রেন্ডকে কল করলে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসে করে বেশ কয়েকজন শিক্ষর্থীরা ঘটনাস্থলে এসে বিএম কলেজের সমন্বায়কের ওপর হামলা চালায়।
আমাদের তিনটি বাস, প্রশাসনিক ভবন, ক্লাস রুম, তিনটি হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় বিএম কলেজ এলাকার দোকানপাটও। দুইটা পারিবারিক বিষয় যে সংঘর্ষের রূপ দিয়েছে সেটি আমরা মোটেই মেনে নিতে পারছি না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল। এই হামলার সমীচীন জবাব আমরা খুব দ্রুতই দেব। এই ঘটনায় আমাদের প্রায় ৪৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. উন্মেষ রায় জানান, হামলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন ৩৩ জনের মত ভর্তি রয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়েছেন। তবে বিএম কলেজের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।