নোয়াখালী প্রতিনিধি:::: নোয়াখালীতে টানা এক সপ্তাহের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে এসব উপজেলার বাসিন্দারা। ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি। এছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক খেতে আমন রোপণ করতে পারছে না।
নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শহরের সব রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের বাসার ভেতরে পানি থৈ থৈ করছে। এতে মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে।
জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, ‘টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে বাড়ির চারপাশে পানি উঠে গেছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। গতরাতের টানা বৃষ্টিতে পানি এখন রান্নাঘরে ঢুকে গেছে। বাড়ির কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ফলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। এত পানি আগে দেখিনি। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না। পানিবাহিত রোগব্যাধি বেড়েই চলছে।’
কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘হাঁটু পানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না।’
সুবর্ণচর উপজেলার হারিছ চৌধুরী এলাকার কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ‘সুর্বণচরের বেশিরভাগ এলাকার কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। প্রশাসন যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কৃষক বাঁচতে পারত।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, ‘নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। পানি নামতে পারছে না। আমরা জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এতে করে সব উপজেলায় পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তাছাড়া পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।’
আর সহায়তার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অবৈধ বাঁধ কেটে পানি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি কমে যাবে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করছি।