বন্যা: হাকালুকিসহ আশপাশের এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা-সরকারি কাজে চরম ব্যাঘাত

বন্যা: হাকালুকিসহ আশপাশের এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা-সরকারি কাজে চরম ব্যাঘাত
নিউজ ডেস্ক : ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে হাকালুকি হাওর এবং জুড়ী নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গত এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।বন্যার পানিতে সরকারি হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ও উপজেলা প্রশাসনিক অফিসসহ আশপাশের আবাসিক এলাকা ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি অফিস ও হাসপাতালের সেবা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটছে। পানিবন্দি থেকে চিকিৎসা সেবা ও উপজেলা প্রশাসনিক কাজকর্ম করছেন সংশ্লিষ্টরা।গত ২৮-২৯ জুন মৌলভীবাজারে বৃষ্টিপাত হলেও নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছিল। ৩০ জুন থেকে বাড়তে থাকে বৃষ্টি, যা অব্যাহত ছিল ২ জুলাই পর্যন্ত। যে কারণে হাকালুকি হাওরসহ মৌলভীবাজারে বিভিন্ন নদ নদীর পানি বাড়তে শুরু করে।বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) কুলাউড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার চারটি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে ডুবে আছে। আটাশটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৬৩ ও উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখানকার মানুষের বাসাবাড়িসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে আছে।এলাকাবাসী জানায়, হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। জেলার নদী তীরবর্তী বন্যাকবলিত অন্যান্য এলাকায় কিছুটা উন্নতি হলেও অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে হাকালুকি হাওর তীরবর্তী এলাকা। চলমান পরিস্থিতিতে রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, পানিবাহিত রোগবালাই ও গবাদিপশুর খাবার ও বাসস্থান সংকটে চরম দুর্ভোগে বানভাসিরা।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ মোহাম্মদ আবু জাফর রাজু, জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ প্রমুখ।ভূকশিমইল গ্রামের আলী আহমদ জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মানুষ খাদ্য সংকটের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভুগছে। এতে পানিবাহিত রোগজীবাণুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে হাওর এলাকায়।কুলাউড়া পৌর এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সজিব আহমদ বলেন, বন্যার পানি কিছুটা কমায় আমার ঘর থেকে পানি অনেকটা নেমে গিয়েছিল। গত দুদিনের বৃষ্টিতে পানি আগের মতো বেড়েছে। তাই আবার আমি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছি।ভূকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, হাকালুকি হাওর এখন তার উত্তাল রূপ দেখাচ্ছে। ভয়াবহ ঢেউ তীরবর্তী এই এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করছে। মানুষের কাঁচা বাড়িঘরও ভাঙছে। হাওর পাড়ের মানুষ এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইউনিয়নের অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, বন্যায় যাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে প্রশাসন। উপজেলা পরিদ প্রাঙ্গণ প্লাবিত থাকায় আমরা নিজেরা পানিবন্দি থেকে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কুলাউড়ায় ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা ১১৬টি। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৩ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।সরকারিভাবে নগদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৬২০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::