বিভিন্ন ভিডিওতে যেমন দেখা গেছে
কাছে আসা একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইমরান নিজেই বলছেন, ‘সাকের ভাই এবার হজ পালন করতে যাচ্ছেন। সবাই সাকের ভাইয়ের হজ কবুল হওয়ার দোয়া করবেন। অল দ্য বেস্ট সাকের ভাই। আমিন, ছুম্মা আমিন।’ ভিডিওর একটি অংশে গরু কেনার পর ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতা ইমরান হাসিমুখে হ্যান্ডশেক করছেন, এমন দৃশ্যও রয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার ইসলাম গ্রুপের গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ করলে জানানো হয়, সাকের আহম্মেদ অফিসে নেই। তিনি কবে অফিসে আসবেন সেটাও উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানা নেই। ভাতিজা সাকের আহম্মেদের কোটি টাকায় ব্রাহামা গরু ক্রয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।সাদিক অ্যাগ্রোর অপর একটি ভিডিও থেকে জানা যায়, সাকের আহম্মেদ ব্রাহামা জাতের দুটা গরু কিনেছেন। প্রতিষ্ঠানটি গরু দুটির নাম দিয়েছে ‘পিয়েল’ ও ‘কমান্ডো’। ভিডিওতে ইমরান বলছেন, ‘দুটি দুম্বা বাসায় পাঠিয়ে দিব ভাই।’ ভিডিওটিতে ব্রাহামা গরু পিয়েল ও কমান্ডোর সঙ্গে সাকেরের একাধিক আত্মীয়কেও দেখা যায়।উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউটিউবার ও ব্লগারদের দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করে আলোচনায় থাকা এবং পশুর দাম বাড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই টার্গেট ইমরানের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দামি গরুতে মুনাফা করার মধ্য আমি খারাপ বা প্রতারণার কিছু দেখি না।’
গরু ও ছাগল কোনোটিরই ডেলিভারি হয়নি
কোটি টাকার গরুটিকে কোরবানি দেওয়া হয়েছে কোথায়? এ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, বিক্রি হলেও সেটি এখনও ডেলিভারিই দেওয়া হয়নি। এ সম্পর্কে সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন বলছেন, ‘যে ব্যক্তি কোটি টাকায় গরুটি কিনেছেন, তিনি এ বছর হজে গিয়েছেন; তাই গরু ডেলিভারি নেবেন আগামী বছর।’ শুধু গরু নয়, সেই আলোচিত ১৫ লাখ টাকা দামের ছাগলও রয়ে গেছে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারেই। উল্লেখ্য, এই ‘ব্রিটল’ জাতের ছাগল আমদানি, উৎপাদন এবং বিক্রয়ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।
এখনও খামারে রয়েছে অবিক্রীত গরু
এখনও ইমরানের কাছে রয়েছে ‘টেক্সাসের সুলতান’সহ কয়েকটি ব্রাহামা গরু। জেডি হাজিন্স ব্রিডের গরুটিও এখনও বিক্রির চেষ্টা করছেন তিনি। ব্রাহামা জাতের গরু বাংলাদেশে আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও ২০২১ সালে জালজালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকটিকে দেশে নিয়ে আসে সাদিক অ্যাগ্রো। গরুগুলো জব্দ করে টানা তিন বছর প্রাণিসম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট একজন মন্ত্রীসহ কয়েকজনের ইচ্ছায় গরুগুলোকে কথিত নিলামে তোলা হয়। চলতি বছরের শুরুতে আয়োজিত এই কথিত ‘নিলামে’ গরুগুলো কিনে নেয় সাদিক অ্যাগ্রো। রমজান মাসে এগুলোকে জবাই করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির কথা ছিল কিন্তু তা করা হয়নি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খামারি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান একজন বড় মাপের প্রতারক। তিনি দাবি করছেন, তিনি বৈধ নিলামে ব্রাহামা গরুগুলো নিয়েছেন। তাহলে তিনি সেই ‘অকশন শিট’ দেখান। আসলে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কয়েক কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি গরুগুলো হাতিয়ে নিয়েছেন। ‘আয়নাবাজির’ মতো গাবতলী হাট থেকে কয়েকটি গরু কিনে সেগুলো কেটে বিক্রি করেছেন। অন্যদিকে ব্রাহামা গরুগুলো লুকিয়ে রেখেছিলেন। এখন ওইসব নিষিদ্ধ গরু কোটি টাকা দামে বিক্রি করছেন।’
পশু চোরাচালানেও জড়িত সাদিক অ্যাগ্রো
সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে সাদিক অ্যাগ্রো শুধু আমদানি নিষিদ্ধ গরু-ছাগলই বিক্রি করছে না; অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি গবাদিপশু চোরাচালানেও জড়িত। তারা ভারত, চীন ও মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে শত শত গরু নিয়ে আসে। এসব গরু ‘বংশীয়, মা-বাবার বংশ ভালো, খানদানিÑ এ ধরনের নানা মিথ্যাচার চালিয়ে বিক্রি করেন ইমরান।সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে পুলিশসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদেরও রয়েছে বিশেষ খাতির। কয়েকদিন আগে তিনি গুলশান থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন। পরে দাপট খাটিয়ে কর্মকর্তাটিকে অন্যখানে বদলিও করেন। গুলশান এলাকায় ‘সাদিক অ্যাগ্রো’ নামে একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে। তিনি পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকারি জমিটি ভাড়া নিয়ে রেস্টুরেন্ট বসিয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশে আমদানি নিষিদ্ধ জাতের গবাদিপশু আমদানি বা পোষার অনুমতি কোনো খামারিকে দেওয়া হয়নি।’ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন আইন-স্বীকৃত। এছাড়া যেসব চটকদার নামসংবলিত ছাগলের কথা বলছেন, সেগুলো আমাদের প্রাণিসম্পদ নীতিমালা ২০০৭ অনুযায়ী অনুমোদিত নয়। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্রাহামা পালন, এর সিমেন্স উৎপাদন বা সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’সাদিক অ্যাগ্রোর নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘ব্রাহামাসহ নিষিদ্ধ জাতের গবাদিপশু পালনকারীদের আমরা নিরুৎসাহিত করি। এ ব্যাপারে খামারিদের সতর্ক থাকা উচিত। সাদিক অ্যাগ্রোসহ যেসব খামারি আমদানি নিষিদ্ধ গবাদিপশু রাখবেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’